রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃষ্টির মধ্যে অনশনে একদল শিক্ষার্থী, অসুস্থ দুজন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা ফেরানোর প্রতিবাদে ঝুম বৃষ্টির মধ্যে শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন। আজ শনিবার বেলা ১১টা ২০ মিনিটের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে।ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কাফনের কাপড় জড়িয়ে আমরণ অনশনে বসেছেন এক শিক্ষার্থী। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনে সামনে এই অনশন অব্যাহত রেখেছেন তিনি। রাতে তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন আরও তিন শিক্ষার্থী। পরে আজ শনিবার সকালে একদল শিক্ষার্থী সেখানে যুক্ত হয়েছেন।

আজ শনিবার বেলা ১১টা ২০ মিনিটেও বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনে সামনে এসব শিক্ষার্থীদের অনশনরত অবস্থায় দেখা গেছে। পরে সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন দুজন। তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

অনশন শুরু করা ওই শিক্ষার্থীর নাম আসাদুল ইসলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর ব্যানারে লেখা আছে—‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা নামক বিষফোড়া পুনর্বহাল রাখার প্রতিবাদে আমরণ অনশন ধর্মঘট’। রাতে আসাদুলের সঙ্গে যুক্ত হওয়া অন্য শিক্ষার্থীরা হলেন আরবি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রমজানুল মোবারক, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের সজিবুর রহমান এবং ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে সমাজকর্ম বিভাগের আরিফুল ইসলাম। এ ছাড়া আজ সকালে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী সেখানে যোগ দিয়েছেন। তাদের রমজানুল মোবারক ও সাঈদ নামের দুই শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নেওয়া হয়।

অনবরত অবস্থায় আসাদুল ইসলাম বলেন, পোষ্য কোটা নামের বিষফোড়া আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এটিকে নির্মূল করার জন্যই এই কর্মসূচি। পোষ্য কোটা বাতিল না করা পর্যন্ত তিনি অনশন ভাঙবেন না।

আরও পড়ুন

রমজানুল মোবারক বলেন, রাকসুকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সুযোগ নিয়েছেন। তাঁরা পোষ্য কোটা বাতিলের সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদও (রাকসু) চান।

আমরণ অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আজ বেলা পৌনে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে যান প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান ও ছাত্র উপদেষ্টা সহযোগী আমিরুল ইসলাম। কিন্তু তাঁদের কথাতেও অনশন ভাঙেননি শিক্ষার্থীরা। পরে বেলা ১১টা ২০ মিনিটের দিকে শুরু হয় ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই অনশন চালিয়ে যান তাঁরা।

আরও পড়ুন

এ বিষয়ে আমিরুল ইসলাম আজ দুপুরে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনশনরত দুই শিক্ষার্থী বৃষ্টিতে ভিজে অসুস্থ পড়েছে। তাঁদের মেডিকেলে নিয়ে এসেছি। দুজনেরই ঠান্ডাজ্বর লেগেছে। তাঁদের প্রয়োজনীয় প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের একজনকে আবাসিক হল এবং অন্যজনকে মেসে দিতে যাচ্ছি।’

গত বৃহস্পতিবার প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১০টি শর্তে পোষ্য কোটা ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীনের সভাপতিত্বে সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত ভর্তি উপকমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়। খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই প্রতিবাদ শুরু করেন। পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাঁদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ চলে। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পরও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়।

আরও পড়ুন