গাড়ি থামিয়ে কাচে চাপাতির কোপ, একজন বলতে থাকেন, ‘গুলি কর, গুলি কর’

ভাঙচুর করা গাড়িছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম নগরে কাস্টমসের দুই কর্মকর্তার প্রাইভেট কার থামিয়ে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গাড়ি ভাঙচুর করে তাঁদের ‘গুলি করার’ হুমকিও দেওয়া হয়।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরের ডবলমুরিং থানার সিডিএ আবাসিক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

গাড়িতে থাকা দুজন হলেন চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান খান ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) বদরুল আরেফিন।

ঘটনার বিবরণ দিয়ে আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অফিসের দিকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ তিন ব্যক্তি এসে আমাদের গাড়ি থামান। থামানোর সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির কাচ ভাঙচুর শুরু হয়। একজন আরেকজনকে বলতে থাকেন, “গুলি কর, গুলি কর”। আমরা কোনোভাবে গাড়ি থেকে নেমে দৌড়াতে থাকি। একটা গলির ভেতর ঢুকে প্রাণে বাঁচি।’

গুলি ছোড়া হয়েছিল কি না, জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘গুলির কোনো আওয়াজ আমরা শুনিনি। আসলে তখন আমরা শুধু দৌড়াচ্ছিলাম। গাড়ি ভাঙচুর করা হলেও আমরা কেউ গুরুতর আহত হইনি। কে বা কারা, কেন এই হামলা করেছে, তা আমরা তাৎক্ষণিকভাবে বুঝতে পারিনি।’

হামলাকারীরা সংখ্যায় তিনজন ছিল বলে জানান আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেন, ‘তারা একটি মোটরসাইকেলে করে আসে। তাদের একজনের হাতে চাপাতি ছিল। গাড়ির কাছে এসে প্রথমে চাপাতি দিয়ে গাড়িতে কোপ দেয় একজন। এরপর একজন গুলি করতে বলে।’

আসাদুজ্জামান বলেন, তাঁরা নিয়মিত কাস্টমসের বিভিন্ন অনিয়ম চিহ্নিত করে প্রতিদিন গড়ে ১০-১২টি মামলা করেন। এ কারণে তাঁরা নানা সময় হুমকিও পেয়েছেন। এই কাজ থেকে সরে আসার জন্যও তাঁদের অতীতে চাপও দেওয়া হয়েছে।

ঘটনার বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ডেপুটি কমিশনার মো. তারেক মাহমুদ বলেন, সম্প্রতি দুই কনটেইনারে আমদানিনিষিদ্ধ পপি বীজ এসেছে। অন্য কনটেইনারে আনা হয়েছে ঘন চিনি। এই অনিয়ম ধরেছেন এ কর্মকর্তারা। আবার বিভিন্ন ধরনের কসমেটিকস আমদানিকে কেন্দ্র করে কাস্টমে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল। মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে মালামাল আনা হচ্ছিল। গত দুই মাসে এই সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এসব কারণে কিছুদিন ধরে তাঁরা বিভিন্ন নম্বর থেকে মুঠোফোনে হুমকি পাচ্ছেন।

তারেক মাহমুদ আরও বলেন, ‘কিছুদিন আগে একজন ফোন করে নিজেকে সাজ্জাদ পরিচয় দিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেন। তবে কোন সাজ্জাদ, তা বলেননি। আমাদের ধারণা, কাস্টমে অনিয়ম ধরার কারণেই আজকের এ হামলা হতে পারে।’

জানতে চাইলে নগরের ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবুল আজাদ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে আছি। বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করছি। তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের অবশ্যই চিহ্নিত করা হবে।’

এ ঘটনার আগে গত ৬ অক্টোবর হুমকির বিষয়ে বন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন রাজস্ব কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান খান। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, ৫ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে একজন ব্যক্তি ফোন করে ভয় দেখান, মেরে ফেলার হুমকি দেন।

বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা আহমেদ বলেন, তিনি ১২ দিন হলো এখানে এসেছেন। জিডির বিষয়টি তাঁর জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবেন।