অবশেষে দুই হাত না থাকা জসিমকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু

জন্ম থেকে দুই হাতহীন জসিম মাতুব্বরের জাতীয় পরিচয়পত্র করে দিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলা প্রশাসন। বুধবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়েছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুরে জন্ম থেকে দুই হাত না থাকা জসিম মাতুব্বরের (২৬) জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) করে দিতে এগিয়ে এসেছে উপজেলা প্রশাসন। তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নগরকান্দার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দবির উদ্দিনের উদ্যোগে আজ বুধবার জসিমকে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তাঁর চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি নেওয়া হয়।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দবির উদ্দিন জানান, আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁর কার্যালয়ে আসেন জসিম। পরে তাঁকে নিয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জসিমের চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি সংগ্রহ করা হয়। ইউএনও আরও বলেন, এ কাজগুলি সম্পাদন হওয়ার পর সঙ্গে তিনি নিজে একটি প্রত্যায়নপত্র সংযুক্ত করে তাৎক্ষণিকভাবে নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়ে দেন। খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যেই জসিম জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে পেয়ে যাবেন।

আরও পড়ুন

জন্ম থেকে দুই হাত নেই, তবু হাল ছাড়েননি ফরিদপুরের নগরকান্দার জসিম মাতুব্বর। পা দিয়ে লিখেই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পেরিয়ে বর্তমানে পড়ছেন ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় পড়াশোনা ও সরকারি–বেসরকারি নানা সেবায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাঁকে।

২০২৩ সাল থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে দপ্তরে ঘুরছিলেন জসিম, কিন্তু কোনো কাজই হয়নি। উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে তাঁকে অনলাইনে আবেদন করতে বলা হয়। একাধিকবার আবেদন জমা দিয়েও কোনো কাজ হয়নি। একপর্যায়ে তিনি হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর জসিমের সাহায্যে এগিয়ে আসেন নগরকান্দার ইউএনও।

জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য নেওয়া হয়েছে জসিম মাতুব্বরের চোখের আইরিশ
ছবি: প্রথম আলো

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে জসিম মাতুব্বর প্রথম আলোকে বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে ইউএনও মহোদয় আমাকে ফোন করে আজ বুধবার সকালে তাঁর অফিসে যেতে বলেন। ইউএনও সাহেব বলেন, “তুমি কি একা আসতে পারবে, নাকি আমি গাড়ি পাঠাব।” পরে সকালে ইউএনওর অফিসে গিয়ে দেখা করি। তিনি আমাকে নিয়ে উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে যান।’

জসিম জানান, বাড়ি ফেরার সময় তাঁকে যাতায়াত খরচ হিসেবে ইউএনও ৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আজ সত্যিই খুব আনন্দিত। জন্ম থেকে হাত না থাকার কারণে অনেক কষ্ট করেছি, অনেক জায়গায় ঘুরেছি; কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র পাইনি। পড়াশোনা ও নানা কাজে আমি সমস্যায় পড়তাম। আজ ইউএনও স্যার আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাঁর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’

ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কদমতলী গ্রামের হানিফ মাতুব্বর ও তসিরণ বেগমের ছেলে জসিম। পড়াশোনার পাশাপাশি অভাবের সংসারে নিজের খরচ চালাতে হাটে সবজি আর ফল বিক্রি করেন। অভাবের সংসারে দিনের বেলা বিভিন্ন হাটে সবজি বিক্রি করে তিনি যে আয় করেন তা দিয়ে নিজের পড়াশোনাসহ খরচ নির্বাহ করেন।

পা দিয়ে লিখে জসিম প্রাথমিক ও অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা এবং মাধ্যমিক পরীক্ষা পাস করার সময় প্রথম আলোতে তাঁকে নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবারও জসিমকে নিয়ে প্রথম আলোর অনলাইনে ‘পা দিয়ে লিখে এইচএসসি পাস জসিমের, হাত না থাকায় জুটছে না এনআইডি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।