সমস্যা-সংকটে ধুঁকছে বিসিক শিল্পনগরী

খানাখন্দে ভরা সড়ক, পানিসংকট, পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে ক্ষুব্ধ স্থানীয় কারখানার মালিক ও শিল্পোদ্যোক্তারা।

বাগেরহাটের বিসিক শিল্পনগরীর প্রবেশমুখের সড়কে পানি জমে আছে। বেহাল সড়কে গাড়ি চলাচলে ভোগান্তিতে পড়তে হয়
ছবি: প্রথম আলো

প্রতিষ্ঠার দুই যুগ পেরিয়ে গেছে। তবু নানা সংকটে খুঁড়িয়ে চলছে বাগেরহাটের বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) শিল্পনগরী। খানাখন্দে ভরা সড়ক, পানিসংকট, পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে ক্ষুব্ধ এখানকার শিল্পোদ্যোক্তারা। এসব সমস্যার সমাধান না হওয়ায় দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে এই শিল্পনগরীর ঘুরে দাঁড়ানোর পথ।

কারখানা মালিকেরা জানান, বেহাল রাস্তাঘাটের কারণে পণ্য পরিবহনে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। খরচও হয় বেশি। লোকসানে পড়ে অনেক কারখানা বন্ধের উপক্রম। সড়ক, পানি, ড্রেনজ সমস্যার সমাধানসহ অবকাঠামো উন্নয়নের দাবি তাঁদের। বিসিক কর্তৃপক্ষ বলছে, দ্রুতই পানিসংকট কেটে যাবে। ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বসানো হচ্ছে সাবমারসিবল পাম্প। শিল্পমালিকদের অন্য সমস্যা সমাধানেরও চেষ্টা চলছে।

বাগেরহাট শহরের দড়াটানা নদীতীরে বাগেরহাট-পিরোজপুর মহাসড়কের পাশে ৯০–এর দশকে ২১ একর জমির ওপর ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পনগরীর অবস্থান। এখানে ১২৩টি প্লটে ৩৭টি ছোট-বড় কারখানা রয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর ১৯৯৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত জমির লিজ বাবদ বিসিক আয় করেছে ২ কোটি ৪৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। একই সময় সার্ভিস চার্জ, পানির বিল ও ভূমিকর বাবদ আয় হয়েছে আরও ১ কোটি ৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকা।

এই শিল্পনগরীতে বর্তমানে চালু থাকা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে নারকেল তেল, অটো রাইস মিল, ডাল মিল, ইজিবাইক সেটিংস, পুরোনো প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাতকরণ ও কোকোনাট ফাইবার মিলস অন্যতম।

নারকেল তেলের মিলমালিক কমল দাম বলেন, যাত্রা শুরুর সময় এখানে অন্তত ১৬টি নারকেলের তেলের মিল ছিল। পরে তেল, ডাল, নারকেলের ছোবরার ম্যাট্রেস, টিন, প্লাস্টিকসহ ৩০টির ওপরে ছোট-বড় কারখানা গড়ে উঠেছে। অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। তবে বিসিকের অভ্যন্তরে পাঁচটি সড়কের চারটি এখন চলাচলের অনুপযোগী। বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও কর্তৃপক্ষ রাস্তাগুলো সংস্কার করছে না। নিদারুণ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

এনএফ কয়ার লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিসিক নগরীর প্রবেশপথের মুখেই বড় বড় গর্ত আর খানাখন্দ। বৃষ্টি হলেই রাস্তায় পানি জমে যায়। বর্ষা মৌসুমে নদীর জোয়ারের পানি উঠেও প্লাবিত হয় রাস্তাঘাট। শিল্পনগরীর অধিকাংশ রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

বিসিক শিল্পনগরী গড়ে ওঠার শুরুতে যে সুযোগ-সুবিধা ছিল, এখন তার অনেক কিছুই নেই। শক্তি ডাল মিলের মালিক স্বপন বসু বলেন, বর্ষা মৌসুমে রাস্তায় হাঁটুসমান পানি থাকে। রাস্তা বেহাল। চালকেরা ট্রাক নিয়ে আসতে চান না। মালিকদের পরিবহন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এখানকার নালা প্রশস্ত না হওয়ায় পানি নামতে পারে না। সুযোগ-সুবিধা না বাড়ায় বেশ কিছু কারখানা বন্ধ হওয়ার পথে।

বাগেরহাট বিসিক শিল্পনগরীর উপমহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) শরীফুল সরদার বলেন, ‘বেশ আগে থেকেই এখানে অবকাঠামোর সমস্যা রয়েছে। এসব সমাধানে কাজ শুরু করেছি। ইতিমধ্যে বিসিকের গেট ও একটি রাস্তার নির্মাণ শেষ হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ভাঙাচোরা রাস্তা মেরামতের কাজ করা হবে। এ ছাড়া বিসিকে সুপেয় পানির যে সংকট রয়েছে, শিগগিরই তার সমাধান হবে। ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সাবমারসিবল পাম্প বসানোর জন্য দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। মাটির নিচে পাথর থাকায় এবং নকশায় কিছু সমস্যা থাকায় কাজ ব্যাহত হচ্ছে। নকশা সংশোধনের পর দ্রুত সময়ের মধ্যে সাবমারসিবল পাম্পের কাজও শুরু হবে।’