যাত্রীদের অভিযোগ, সংকট সৃষ্টি করে নতুন ভাড়ায় অভ্যস্ত করানো হচ্ছে

হঠাৎ বাড়তি ভাড়ার কারণে যাত্রীদের অনেকেই গন্তব্যে যেতে চাচ্ছেন না। আগের ভাড়ায় যাতায়াতের আশায় সড়কে দাঁড়িয়ে আছেন। রোববার সকালে সিলেটে নগরের হ‌ুমায়ুন রশীদ চত্বরেছবি: আনিস মাহমুদ

সিলেটের হ‌ুমায়ুন রশীদ চত্বর এলাকায় দাঁড়িয়ে বাসের অপেক্ষা করছিলেন হারুন মিয়া। তাঁর হাতে বস্তায় প্যাঁচানো একটি কোদাল। যাবেন হবিগঞ্জের আউশকান্দিতে। রোববার বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ওই বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়েও যেতে পারেননি তিনি।

হারুন মিয়ার অভিযোগ, আগে সিলেট থেকে বাসে হবিগঞ্জের আউশকান্দিতে যেতে তাঁকে ৫০ থেকে ৬০ টাকা ভাড়া দিতে হতো। এখন চালকের সহকারী ১০০ টাকা দাবি করছেন। এ জন্য সামনে দিয়ে কয়েকটি বাস ছেড়ে গেলেও তিনি ওঠেননি। তিনি বলেন, ‘আমি ৭০ টাকা পর্যন্ত বলেছি। কিন্তু এ ভাড়ায় নিতে চাচ্ছেন না হেলপাররা। এমনিতেই আয়রোজগার কম। এর মধ্যে ভাড়া বৃদ্ধিতে ভোগান্তিতে পড়েছি।’

হারুন মিয়ার মতে, সড়কে যানবাহন কম হওয়ায় প্রতিযোগিতা নেই। এতে যাত্রীরা একটিতে না হলেও অন্যটিতে যেতে পারতেন।

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) প্রধান কার্যালয়ে পরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে বিআরটিএর ভাড়া নির্ধারণী কমিটির বৈঠকে গতকাল শনিবার বিকেলে বাসভাড়া সর্বোচ্চ ২২ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দূরপাল্লার বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৮০ পয়সার জায়গায় ২ টাকা ২০ পয়সা হবে। এ ক্ষেত্রে ভাড়া বেড়েছে কিলোমিটারপ্রতি ৪০ পয়সা, অর্থাৎ ২২ দশমিক ২২ শতাংশ।

ভাড়া বৃদ্ধির প্রথম দিনে সিলেট থেকে হবিগঞ্জগামী বাসের সংখ্যা কমেছে বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা। নগরের হ‌ুমায়ুন রশীদ চত্বরে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা মৌলভীবাজারের যাত্রী আবেদ হোসেনের অভিযোগ, বাসের সংখ্যা কমিয়ে সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে যাত্রীদের কাছ থেকে নতুন বর্ধিত ভাড়ায় অভ্যস্ত করানো হচ্ছে। এটি পরিবহনশ্রমিক ও মালিকদের কৌশল।

সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট থেকে হবিগঞ্জে যাওয়া যাত্রীদের কাছ থেকে শনিবার পর্যন্ত জনপ্রতি ১৮০ টাকা, মৌলভীবাজারের যাত্রীদের থেকে ১২০ টাকা ও শ্রীমঙ্গলের যাত্রীদের কাছ থেকে ১৫০ টাকা করে ভাড়া নেওয়া হতো। এখন নতুন হারে হবিগঞ্জের যাত্রীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ভাড়া ৪০ টাকা বৃদ্ধি করে ২২০ টাকা, মৌলভীবাজারের যাত্রীদের কাছ থেকে ১৫ টাকা বৃদ্ধি করে ১৩৫ টাকা এবং শ্রীমঙ্গলের যাত্রীদের কাছ থেকে ৩৫ টাকা বৃদ্ধি করে ১৮৫ টাকা নেওয়া হচ্ছে।

এ ছাড়া সিলেটের কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড থেকে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে চলাচল করা বাসে জনপ্রতি ২০ টাকা করে ভাড়া বৃদ্ধি করে ১৪০ টাকা করা হয়েছে।

শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাসগুলোতে ১৬০ টাকার ভাড়া বৃদ্ধি করে নেওয়া হচ্ছে ১৯০ টাকা।
বাসের সংখ্যা কমানো হয়নি বলে দাবি করেছেন সিলেট জেলা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. জিয়াউল কবির। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সকালের দিকে একটু কমসংখ্যক বাস যাতায়াত করে। এ ছাড়া যেহেতু বৈঠকের মাধ্যমে নতুন ভাড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাই সে অনুযায়ীই ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।