কঠোর নিরাপত্তায় আদালতে একরামুল, কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ
সম্ভাব্য অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আজ বুধবার সকালেই কারাগারে পাঠানো হয়েছে নোয়াখালী-৪ আসনের (সদর ও সুবর্ণচর) সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীকে। সকাল সাতটার দিকে জেলার সুধারাম থানায় দায়ের হওয়া একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে একরামুল করিমকে নোয়াখালী আদালতে হাজির করা হয়। সংক্ষিপ্ত শুনানি শেষে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে তাঁকে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থায় নোয়াখালী জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রামের খুলশী এলাকার একটি বাড়ি থেকে পলাতক সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৭–এর একটি দল। গ্রেপ্তারের সময় একরামুলের ওই বাসা থেকে বেশ কিছু দেশি-বিদেশি মুদ্রা জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তারের পর গভীর রাতে একরামুল করিম চৌধুরীকে নিয়ে নোয়াখালীর উদ্দেশে রওনা হয় র্যাব।
জেলা পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে, একরামুল করিমকে বহনকারী র্যাবের দলকে এগিয়ে আনতে সকালেই বেগমগঞ্জ থানা এলাকায় পৌঁছে যায় সুধারাম থানা-পুলিশের একটি দল। সকাল আনুমানিক সাড়ে ছয়টার দিকে র্যাব ও পুলিশের একটি যৌথ দল একরামুল করিমকে সুধারাম থানায় না নিয়ে সরাসরি নোয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নিয়ে যান। সকাল সাতটার দিকে তাঁকে সুধারাম থানায় দায়ের হওয়া শ্রমিক দলের কর্মী মো. খোকনকে (২৫) গুলি করে হত্যার মামলায় আদালতে উপস্থাপন করা হয়। সংক্ষিপ্ত শুনানি শেষে একরামুল করিম চৌধুরীকে জেলা কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাজ্জাদ হোসেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, একরামুল করিমকে যে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, ওই মামলায় মোট আসামি ৫৩ জন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন নোয়াখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সহিদ উল্যাহ খান, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শিহাব উদ্দিন, সাবেক চেয়ারম্যান এ কে এম শামছু উদ্দিন জেহান, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক একরামুল হক, জেলা পরিষদের সদস্য কামাল হোসেন, নোয়াখালী পৌরসভার কাউন্সিলর নাসিম উদ্দিন ও ফখরুল ইসলাম।
সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো নোয়াখালী-৪ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর আগে ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে নোয়াখালী-৪ আসনে আওয়ামী লীগের টিকিট না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নোয়াখালী-৫ আসনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান তিনি। ওই নির্বাচনে হারেন ওবায়দুল কাদেরও।
একরামুল করিম চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি কবিরহাট উপজেলায়। যেটি নোয়াখালী-৫ আসনের অন্তর্ভুক্ত। নোয়াখালী-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁর স্ত্রী কামরুন নাহার শিউলীও ২০০৯ নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হন। পর পর তিন মেয়াদে সেখানে অন্য কেউ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হতে পারেননি। সর্বশেষ একরামুলের ছেলে আতাহার ইশরাক শাবাব চৌধুরী সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
সুধারাম থানা সূত্র জানায়, সাবেক সংসদ সদস্য একরামুল করিমের বিরুদ্ধে সুধারাম থানায় একটি হত্যা মামলা, একটি বিস্ফোরক ও অপহরণ মামলা, কবিরহাট থানায় একটি অস্ত্র মামলা ও সোনাইমুড়ী থানায় একটি হত্যা মামলাসহ মোট চারটি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকার একটি থানায়ও তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। সর্বশেষ চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার হওয়ার সময় বাসা থেকে দেশি-বিদেশি অর্থ জব্দ হওয়ার ঘটনায়ও মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, নিরাপত্তার কারণে সাবেক সংসদ সদস্য একরামুল করিমকে সকালে আদালতে হাজির করা হয়েছে। পরে আদালতের নির্দেশে তাঁকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। এক প্রশ্নের জবাবে ওসি জাহেদুল হক বলেন, একরামুল করিমকে আদালতে উপস্থাপনের সময় রিমান্ডের কোনো আবেদন জানানো হয়নি। তবে তদন্তের প্রয়োজনে পরবর্তী সময়ে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।