ফেনীতে পায়ের রগ কেটে দেওয়া ছাত্রলীগ নেতাকে আসামি করে প্রতিপক্ষের পাল্টা মামলা
ফেনীর সোনাগাজীতে সাখাওয়াত হোসেন চৌধুরী নামের এক ছাত্রলীগ নেতার পায়ের রগ কেটে দেওয়ার ঘটনায় পাল্টা মামলা করেছে প্রতিপক্ষ। আহত সাখাওয়াতকে প্রধান আসামি করে ১১ জনের নামে গতকাল সোমবার বিকেলে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলাটি হয়।
সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালেদ হোসেন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের চরডুব্বা গ্রামের কামাল উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। মামলায় ১১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয়ের আরও ৫-৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর আগে একই ঘটনায় অপর পক্ষও একটি মামলা করে।
এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জেরে স্থানীয় যুবলীগ কর্মীদের একটি দল গত শনিবার রাতে আমিরাবাদ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন চৌধুরীর পায়ের রগ কেটে দেয়। এ সময় তাঁর ছোট ভাই নয়ন উদ্দিন চৌধুরী (১০) এবং ওয়ার্ড যুবলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য মোশারফ হোসেনকেও কুপিয়ে আহত করা হয়। গত রোববার এ ঘটনায় মোশারফ হোসেনের ভাই সাহাব উদ্দিন বাদী হয়ে ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এর এক দিন পর থানায় মামলা করে প্রতিপক্ষ। নতুন মামলাটিতে সাখাওয়াত হোসেন চৌধুরী ছাড়াও আহত যুবলীগ নেতা মোশারফ হোসেনকেও আসামি করা হয়েছে।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন মো. সাইমুন, মো. তামিন, মো. সাগর, মো. ইমন, মো. সাহেদ, তাওহীদ, মো. সিয়াম, মেজবাহ উদ্দিন ও মো.এমরান হোসেন।মামলার বাদী কামাল উদ্দিন এজাহারে উল্লেখ করেছেন, তাঁর স্কুলপড়ুয়া ছেলে আইন উদ্দিনের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা সাখাওয়াত হোসেনের পূর্ববিরোধ ছিল। এর জেরে ২৫ মার্চ রাতে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার সময় তাঁর ছেলে আইন উদ্দিনের ওপর দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালানো হয়। হামলায় তাঁর ছেলে আইন উদ্দিন ও আত্মীয় ফয়েজ উল্যাহ আহত হয়েছেন।
তবে সাখাওয়াত হোসেন চৌধুরীর পরিবারের অভিযোগ, চরডুব্বা গ্রামের যুবলীগ কর্মী আরিফ হোসেন ও সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে ২০-২২ জন নেতা-কর্মী দলবদ্ধ হয়ে সাখাওয়াত হোসেন চৌধুরী ও মোশারফ হোসেনের ওপর হামলা চালান। হামলাকারী নেতা–কর্মীরা সাখাওয়াতের পায়ের রগ কেটে দিলে তাঁর চিৎকার শুনে ছোট ভাই নয়ন উদ্দিন চৌধুরী এগিয়ে আসেন। এ সময় নয়নকেও কুপিয়ে আহত করা হয়। আহত ছাত্রলীগ নেতা সাখাওয়াত ও তাঁর ছোট ভাই নয়ন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। যুবলীগ নেতা মোশারফ হোসেন রয়েছেন ফেনীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে।
আহত সাখাওয়াত হোসেন চৌধুরী ও মোশারফ হোসেনকে মামলায় আসামি করায় দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক জহিরুল আলম বলেন, যাঁর পায়ের রগ কাটা হয়েছে, তাঁকে আসামি করে মামলা করা খুবই নিন্দনীয়।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিনহাজ উদ্দিন ভূঞা বলেন, সাখাওয়াত হোসেন চৌধুরীর ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা না হলে উপজেলা ছাত্রলীগ বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও আমিরাবাদ ইউপির চেয়ারম্যান আজিজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনায় জড়িত দুটি পক্ষই দলের লোক। তুচ্ছ ঘটনায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখে সমাধানের চেষ্টা করছেন। যুবলীগের কেউ দোষী হলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোনাগাজী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার তাসলিম হুসাইন প্রথম আলোকে বলেন, দুটি পক্ষ পাল্টাপাল্টি মামলা করেছে। পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তদন্তে কেউ নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাঁকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।