সাধারণ ওয়ার্ডে লড়ছেন দুই নারী প্রার্থী 

সংরক্ষিত ওয়ার্ডের বাইরে সাধারণত নারীদের কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেখা যায় না। তবে এবার খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুজন নারী প্রার্থী কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মোট ছয়জন নারী প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তবে শেষ মুহূর্তে চারজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন।

ওই দুই নারী প্রার্থী হলেন ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের রোজিনা শেখ আয়শা ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের ফরিদা বেগম। আর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের তাহেরা খাতুন, ২১ নম্বর ওয়ার্ডের মুক্তা বেগম, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের মোছা. নাজমুন্নাহার ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের হোসনে আরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনা সিটি করপোরেশনের মধ্যে ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ড রয়েছে। আর নারীদের জন্য সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে ১০টি। সাধারণ ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৩৬ জন কাউন্সিলর প্রার্থী। সংরক্ষিত ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩৯ জন নারী প্রার্থী। এর মধ্যে ১৯ ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন আটজন করে।  

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দেওয়া হলফনামা ঘেঁটে দেখা গেছে, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী রোজিনা শেখ আয়শার বয়স মাত্র ৩২ বছর। এখনো বিয়ে করেননি, স্বশিক্ষিত। তাঁর ঘরোয়া ব্যবসা রয়েছে। ওই ব্যবসা থেকে বছরে তিনি আয় করেন দেড় লাখ টাকা। এ ছাড়া একতলা একটি বাড়ি রয়েছে তাঁর। আর নগদ টাকা রয়েছে ৩০ হাজার। এর বাইরে হলফনামায় তিনি আর কোনো সম্পদের বিবরণ দেননি। রোজিনা শেখ নির্বাচনে খরচ করতে চান ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এর মধ্যে তিনি নিজের ব্যবসা থেকে আয় করা ২০ হাজার টাকা খরচ করবেন। ভাইয়ের কাছ থেকে ধার নেবেন ২৫ হাজার টাকা। মামার কাছ থেকে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত দান পাবেন ২৫ হাজার টাকা। আত্মীয়স্বজনের বাইরে অন্য ব্যক্তির কাছ থেকে ধার নেবেন ২০ হাজার ও দান পাবেন ৩০ হাজার টাকা।    

কেন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন জানতে চাইলে রোজিনা শেখ আয়শা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নারী। তিনি যদি পুরো দেশ চালাতে পারেন, তাহলে আমি কেন একটি ওয়ার্ড চালাতে পারব না। সংরক্ষিত ওয়ার্ড তিনটি সাধারণ ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হয়। সেখানে নির্বাচিত কাউন্সিলরদের তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এ কারণে আমি সাধারণ ওয়ার্ড থেকে নির্বাচন করছি।’

ওই নির্বাচনের ব্যাপারে এলাকার সবাই বেশ ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। সবাই বেশ উৎসাহ দিচ্ছেন। পুরুষদের পাশাপাশি প্রচার-প্রচারণায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে জানান রোজিনা শেখ।

৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ফরিদা বেগমের বয়স ৫১ বছর। তিনি গৃহিণী, অষ্টম শ্রেণি পযন্ত পড়ালেখা করেছেন। তাঁর নগদ টাকা রয়েছে ৫০ হাজার আর ব্যাংকে রয়েছে ১০ হাজার। তিনি নির্বাচনে খরচ করতে চান দুই লাখ টাকা। এর মধ্যে নিজের ব্যবসা থেকে খরচ করবেন ১০ হাজার টাকা, এক ছেলে ধার হিসেবে দেবেন ৫ হাজার টাকা ও আরেক ছেলে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে দান করবেন ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দেওয়া হলফনামা ঘেঁটে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

জানতে চাইলে ফরিদা বেগম বলেন, ‘নিজের কারণেই নারীদের অবহেলার চোখে দেখে মানুষ, কম গুরুত্ব দেয়। সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতেই সাধারণ কাউন্সিলর পদে অন্য পুরুষদের সঙ্গে নির্বাচন করছি। আমার মনে হয় প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে এভাবে একাধিক নারীকে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করা উচিত।’