বাঞ্ছারামপুর কলেজে নিয়োগে জালিয়াতির অভিযোগে অধ্যক্ষসহ ৪ শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মানচিত্র

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর ডিগ্রি মহাবিদ্যালয়ে (বর্তমানে বাঞ্ছারামপুর সরকারি কলেজ) জালিয়াতির মাধ্যমে অধ্যক্ষ ও প্রভাষক পদে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগে কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ ও তাঁর স্ত্রীসহ চার শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত সোমবার দুদকের সহকারী পরিচালক মাসুম আলী বাদী হয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুমিল্লায় মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন অধ্যক্ষ মো. আবদুর রহিম, সাবেক সহকারী অধ্যাপক (ঘটনার সময় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ) আবদুল কাদের, অধ্যক্ষ আবদুর রহিমের স্ত্রী একই কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক রত্না খানম ওরফে রত্না বেগম ও নারায়ণগঞ্জের সরকারি তোলারাম কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক সায়েরা বেগম। ঘটনার সময় সায়েরা বেগম ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০১০ সালে বাঞ্ছারামপুর ডিগ্রি মহাবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ছিলেন সহযোগী অধ্যাপক আবদুল কাদের। তখন কলেজে অধ্যক্ষ ও প্রভাষক পদে লোক নিয়োগের জন্য তাঁকে দায়িত্ব দিয়ে নিয়োগ বোর্ডের সদস্যসচিব করা হয়। ২৬ মার্চ একটি জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০১০ সালের পরিপত্র অনুযায়ী অধ্যক্ষের শূন্য পদে নিয়োগের জন্য প্রার্থীর ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

অধ্যক্ষ পদে আবেদন করা মো. আবদুর রহিমের ১ বছর ৪ মাস ২৯ দিন অভিজ্ঞতা কম ছিল। তিনি আগের কলেজে থেকে ২০০৫ সালে সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়েছিলেন, যা গোপন রাখেন। এ জন্য আগের কলেজের ছাড়পত্রও জমা দেননি। এসব জেনেও তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কোনো আপত্তি না দিয়ে আবদুর রহিমকে নিয়োগে সহায়তা করেন।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০১০ সালের ৩ আগস্ট নিয়োগ পান আবদুর রহিম। এরপর প্রয়োজনীয়সংখ্যক প্রার্থী না থাকার পরও একই কলেজে নিজের স্ত্রী রত্না খানমকে প্রভাষক (বাংলা) পদে নিয়োগ দেন। তখন ওই কলেজে বাংলা বিভাগ ছিল না। কিন্তু অধ্যক্ষ আবদুর রহিম তাঁর স্ত্রীকে নিয়োগ দিতে কলেজে সমাজকল্যাণ বিভাগের পরিবর্তে বাংলা বিভাগের অনুমোদন করিয়ে নেন। এরপর বাংলা স্নাতক (সম্মান) বিষয়ে পাঁচজন ও স্নাতক (পাস) বিষয়ে একজনসহ মোট ছয়জন প্রভাষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়।

বর্তমানে সরকারি তোলারাম কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক সায়েরা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি তো নিয়োগ দেওয়ার কেউ না। আমি সুপারিশ করেছি মাত্র। নিয়োগ আমি দিইনি।’

যোগাযোগ করা হলে বাঞ্ছারামপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এখন মিটিংয়ে আছেন। পরে কথা বলবেন।  

২০১৯ সালের ৩০ জুলাই মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পাঠানো এক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছিল, আবদুর রহিমকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে আগের কলেজ থেকে সাময়িক বরখাস্ত ও মামলা চলমান থাকার তথ্য গোপন রাখার অভিযোগ মাউশির তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে মাউশি ওই বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে কলেজের শিক্ষকদের এমপিওতে (মাসিক বেতন প্রদান আদেশে) আবদুর রহিমের বেতনসহ ভাতা বন্ধ করে দেয়। এ ছাড়া তথ্য গোপন করে উত্তোলন করা দুই মাসের বেতন বাঞ্ছারামপুর জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপকের এক চিঠির পর ব্যাংকে জমা দেন অধ্যক্ষ।