তিন দিনে সাড়ে ৬ লাখ ঘনফুট সাদাপাথর স্বেচ্ছায় জমা দিয়েছেন লোকজন
প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লুট হওয়া প্রায় সাড়ে ছয় লাখ ঘনফুট সাদাপাথর স্বেচ্ছায় জমা দিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থেকে লুট হওয়া এসব পাথর নিজ খরচে প্রশাসনের কাছে তুলে দেওয়ার নির্ধারিত সময়সীমা আজ মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটায় শেষ হয়েছে।
বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সাদাপাথর এলাকায় গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, স্বেচ্ছায় মানুষজন সাড়ে ছয় লাখ ঘনফুট সাদাপাথর জমা দিয়েছেন। এর বাইরে যৌথ বাহিনী ও টাস্কফোর্সের বিভিন্ন অভিযানে মোট সাড়ে ১৯ লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার হয়। এসব পাথরের ১১ লাখ ঘনফুট সাদাপাথরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, লুটের পাথর স্বেচ্ছায় তিন দিনের মধ্যে জমা দিয়ে দায়মুক্তি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে গত শনিবার জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি বার্তা দেওয়া হয়। গত রোববার থেকে আজ বিকেল পাঁচটার ভেতরে যাঁরা জমা দেবেন না, পরবর্তী সময়ে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তখন জানানো হয়। মাইকিং করার পাশাপাশি নানাভাবে স্থানীয় প্রশাসন এ বার্তা জনগণকে জানায়।
জেলা প্রশাসনের বার্তা পেয়ে লোকজন গত শনিবার থেকেই নৌকা ও ট্রাকযোগে লুটের পাথর নিয়ে এসে সাদাপাথর-সংলগ্ন ভোলাগঞ্জ এলাকায় জমা দেন। মোট সাড়ে ছয় লাখ ঘনফুট পাথর লোকজন জমা দিয়েছেন। তবে কতসংখ্যক মানুষ এসব পাথর জমা দিয়েছেন, এ তথ্য নির্ধারণে প্রশাসন এখনো কাজ করছে।
এদিকে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে জেলা প্রশাসক সারওয়ার আলম উদ্ধার হওয়া সব পাথর আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে প্রতিস্থাপিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী, ট্রাকমালিক-শ্রমিক সবার সহযোগিতায় উদ্ধার করা পাথর পরিবহন করা হচ্ছে। প্রতিস্থাপনের কাজে পাঁচ শর বেশি শ্রমিক কাজ করছেন। এ ছাড়া অন্তত ৪০০ নৌকা ও ৩০০ ট্রাক পাথর পরিবহন করছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ায় এখন যাঁদের কাছেই লুটের সাদাপাথর পাওয়া যাবে, তাঁদের বিরুদ্ধেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগামীকাল বুধবার থেকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের জানান।
সাদাপাথর থেকে কী পরিমাণ পাথর লুট হয়েছে, এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘যে পরিমাণ পাথর উদ্ধার হয়েছে, এর আরও ৩০ শতাংশ পাথর হয়তো চলে গেছে, ভেঙে ফেলা হয়েছে। এসব পাথর সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলে গেছে। তবে প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ সবার ওয়ান্ডারফুল টিমওয়ার্কে সাদাপাথর উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এসব প্রতিস্থাপন করলে সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র আগের মতো ভালো একটি জায়গায় রূপ নেবে।’
লুটের ঘটনায় বেশ কয়েকজন মূল হোতা গ্রেপ্তার হয়েছেন জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘লুটের ঘটনায় অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। মূল হোতাদের গ্রেপ্তারেও পুলিশ কাজ করছে। বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তারও হয়েছেন। শিগগির অন্যরাও গ্রেপ্তার হবেন। তবে নিরীহ, নিরপরাধ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন, সেটা দেখা হচ্ছে। প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রাথমিক প্রতিবেদনে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের নাম থাকায় কোনো চাপ অনুভব করছেন কি না, এক সাংবাদিক এমন প্রশ্ন করেন। জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘অ্যান্টি করাপশন কমিশন একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। তারা আলাদাভাবে কাজ করছেন এবং তাঁরা সেটা দেখবেন, তদন্ত করবেন, তাঁরা সেই অনুযায়ী নিজেদের কাজ করবেন। এ বিষয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই।’
গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময়কালে সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানও ছিলেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাদাপাথরসহ প্রতিটি স্পটে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। যাঁরা লুটের সঙ্গে জড়িত, অভিযানের স্বার্থে তাঁদের নাম বলছি না। আপাতত ডিটেইলস না বললে ভালো হয়। তবে দোষীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।’
এদিকে সাদাপাথর লুটের ঘটনায় গঠিত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তদন্ত কমিটি আজ সকালে সাদাপাথর এলাকা পরিদর্শন করেছে। পাঁচ সদস্যের এই কমিটির নেতৃত্বে আছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার বিভাগের সচিব জাহেদা পারভীন। তদন্তকারী দলের সদস্যরা স্থানীয় ব্যবসায়ী, এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে তাঁরা গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি।