বান্দরবানে কেএনএফের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির প্রথম মুখোমুখি বৈঠক হচ্ছে আজ

বান্দরবান জেলার মানচিত্র

বান্দরবানের রুমায় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সঙ্গে নতুন সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সঙ্গে আজ রোববার প্রথম মুখোমুখি বৈঠক হচ্ছে।

বৈঠকে কেএনএফের পক্ষে শীর্ষ নেতারা না থাকলেও পাঁচজন মধ্যম সারির নেতা থাকবেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আহ্বায়ক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমার নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি দল বৈঠকে অংশগ্রহণ করছে।

শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, রুমা উপজেলা সদর থেকে চার কিলোমিটার দূরে মুনলাইপাড়ায় বেলা ১১টায় বৈঠকটি শুরু হয়। বৈঠকের পূর্বপ্রস্তুতি সম্পন্ন করার জন্য শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সদস্যসচিব ও বম সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি লালজার লম বমের নেতৃত্বে একটি দল গতকাল শনিবার থেকে সেখানে রয়েছেন।

লালজার লম বম জানিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে উভয় পক্ষের মধ্যে বৈঠক হবে। এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির বৈঠকে অংশগ্রহণকারী দলটি জেলা শহর থেকে সকাল আটটায় রুমার উদ্দেশে গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির কয়েকজন সদস্য জানিয়েছেন, কেএনএফের প্রধান নাথান বম, সাধারণ সম্পাদক ভানচুংলিয়ান ও সশস্ত্র শাখার লালজংময় বম প্রথম বৈঠকে থাকবেন না। প্রথম বৈঠকের আলাপ-আলোচনার অগ্রগতি হলে পরবর্তী বৈঠকে তাঁরা অংশগ্রহণ করতে পারেন।

এবারের বৈঠকে কেএনএফের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন কেএনএফের সহসভাপতি ও রোয়াংছড়ির অবিচলিতপাড়ার কার্বারি (পাড়াপ্রধান) লাল এং লিয়ান বম। তাঁর সঙ্গে থাকছেন রোয়াংছড়ি অঞ্চলের কেএনএফের সহসভাপতি ও ওই অঞ্চলের সশস্ত্র শাখার প্রধান পিয়ার নিন বম, জেলা শহরতলি শ্যারনপাড়ার চেওসাং বম ও পেনখুপ বম।

শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আহ্বায়ক ক্যশৈহ্লা মারমার সঙ্গে কমিটির সদস্যসচিব লালজার লম বম, মুখপাত্র কাঞ্চনজয় তঞ্চঙ্গ্যা, আইনজীবী বাসিংথুয়াই মারমা, সাংবাদিক মনিরুল ইসলামসহ ১১ সদস্যের একটি দল থাকছে। এ ছাড়া সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শাহ আলম থাকছেন।

প্রথম বৈঠকে কেএনএফের দাবিদাওয়া নিয়ে তেমন আলোচনা হবে না বলে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির নেতারা জানিয়েছেন। শুধু একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হবেন। পাশাপাশি কীভাবে রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলার দুর্গম এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনা যায় এবং কেএনএফের সদস্যরা স্বাভাবিক জীবনে কীভাবে ফিরবেন, সে ব্যাপারে ব্যাপারে আলোচনা হতে পারে।

কেএনএফের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠক বসার জন্য এই পর্যন্ত ৫ অক্টোবর ও ২৩ অক্টোবর দুবার সময় নির্ধারণ করা হলেও বৈঠক হয়নি। আজকের বৈঠকে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন হলে ভবিষ্যতে ধারাবাহিক বৈঠক হতে পারে বলে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির নেতারা জানিয়েছেন।

পাহাড়ে নতুন সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ গত বছরের মাঝামাঝি থেকে বান্দরবানের রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলার দুর্গমে এবং রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নে তৎপরতা শুরু করে। তাদের দাবি, তারা বম, পাংখুয়া, লুসাই, খুমি, খেয়াং ও ম্রোদের অধিকারের জন্য আন্দোলন করছে। তাদের বিরুদ্ধে গোপন আস্তানায় সমতলের জঙ্গিগোষ্ঠী জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ারও অভিযোগ ওঠে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গত বছরের অক্টোবর থেকে কেএনএফ ও শারক্বীয়া জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। অভিযানে পাহাড় থেকে ৩৮ জন জঙ্গি ও বহু কেএনএফ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানে কেএনএফের হামলা পাঁচজন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিহত হয়েছেন।

সশস্ত্র কেএনএফের সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য গত মে মাসে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠন করা হয়। এই পর্যন্ত কয়েক দফা কেএনএফ নেতাদের সঙ্গে অনলাইন বৈঠকের এবারে প্রথম মুখোমুখি বৈঠকের আয়োজন করা হচ্ছে।