টেকনাফ-সোনাদিয়া সৈকতে দুই মাসে ৪ হাজার ৭৭৬টি ডিম পেড়েছে ৪১টি কাছিম

টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে পেড়ে যাওয়া মা কাছিমের ডিম। বাচ্চা ফোটাতে নেকমের কর্মীরা ডিমগুলো সংরক্ষণ করছেনছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের সোনাদিয়া থেকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট ‘অলিভ রিডলে বা জলপাই রঙের’ প্রজাতির ৪১টি কাছিম গত দুই মাসে ৪ হাজার ৭৭৬টি ডিম পেড়েছে।

সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে ৫টি কাছিম কক্সবাজারের উখিয়ার প্যাঁচার দ্বীপ সৈকতে ৫৫০টি ডিম পাড়ে। সৈকতের বালিয়াড়িতে প্রায় দুই ফুট গর্ত করে কাছিমগুলো ডিম পেড়ে আবারও সাগর ফিরে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির অর্থায়নে পরিচালিত নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টের (নেকম) কর্মীরা কাছিমের ডিমগুলো সংগ্রহ করে হ্যাচারিতে মজুত করেছেন। এ প্রকল্পের মাধ্যমে সামুদ্রিক কাছিমের বংশবিস্তারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সৈকতে ডিম পাড়া কাছিমগুলো অলিভ রিডলে সি টার্টল বা জলপাইরঙা সামুদ্রিক কাছিম প্রজাতির।

গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে কক্সবাজার-টেকনাফ-সোনাদিয়া সৈকতে ডিম পাড়তে আসছে কাছিম। এই সময়ে প্রায় ৮৮টি কাছিমের মরদেহ ভেসে এসেছে কক্সবাজার টেকনাফের সৈকতে। কাছিমগুলো ডিম পাড়তে আসার সময় জেলেদের পেতে রাখা জালে আটকা পড়ে এবং নৌযানের প্রপেলারের আঘাতে মারা গেছে বলে গবেষকেরা জানিয়েছেন।

কাছিমের ডিম ফোটানোর জন্য সোনাদিয়ার পূর্বপাড়া, পশ্চিমপাড়া, প্যাঁচার দ্বীপ, মাদারবুনিয়া ও শাহপরীর দ্বীপ সমুদ্রসৈকতের বালিয়াড়িতে বেড়া দিয়ে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছেন নেকমের কর্মীরা। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ইউএসএইডের নেকমের উপপ্রকল্প পরিচালক শফিকুর রহমান।

শাহপরীর দ্বীপে অবস্থিত নেকমের হ্যাচারি
ছবি: সংগৃহীত

শফিকুর রহমান বলেন, ‘ডিমগুলো থেকে বাচ্চা ফোটাতে ৬০ থেকে ৬৫ দিন সময় লাগবে। এ সময়ে নেকমের কর্মীরা হ্যাচারিতে থাকা ডিমগুলো দেখভাল করবেন। হ্যাচারিতে ডিমগুলো প্রজননের জন্য দুই ফুটের মতো দুটি গর্ত খোঁড়া হয়।

নেকম সূত্র জানায়, সোনাদিয়া পূর্বপাড়া ৭টি কাছিম থেকে ৬০৩টি ডিম, সোনাদিয়া পশ্চিমপাড়ায় ৬টি কাছিম থেকে ৬২৬টি ডিম, প্যাঁচার দ্বীপ ৫টি কাছিম থেকে ৫৫০টি ডিম, মাদারবুনিয়া ৪টি কাছিম থেকে ৪৯৮টি ডিম ও শাহপরীর দ্বীপ ১৯টি কাছিম থেকে ২ হাজার ৫০০টি ডিম পেড়েছে। সর্বমোট ৪১টি কাছিম থেকে ৪ হাজার ৭৭৬টি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে।

কাছিমের ডিম সংরক্ষণ ও প্রজননপ্রক্রিয়ায় নেকমের পাশাপাশি বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটও সহযোগিতা করছে।

নেকমের উপপ্রকল্প পরিচালক শফিকুর রহমান বলেন, ‘অলিভ রিডলে প্রজাতির মা কচ্ছপের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছি আমরা। কাছিম সমুদ্রের জীববৈচিত্র্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই প্রাণী বিপন্ন হলে সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থান ভেঙে পড়বে। পরিবেশের বিপর্যয় ঘটবে।’