সৌন্দর্যের টানে কাশবনে

এই শরতেও মৌলভীবাজার শহরের রায়শ্রী-মনোহরকোনায় আধা কিলোমিটারজুড়ে কাশফুল ফুটেছে। অনেকেই এখানে বেড়াতে আসছেন।

মৌলভীবাজার শহরের মনু নদের পাড়ে রায়শ্রীর চোখজুড়ানো কাশবনে। সম্প্রতি তোলা ছবি
প্রথম আলো

এক পাশে ভাটির টানে বয়ে চলেছে মনু নদ, অন্য পাশে শান্ত গ্রাম। গ্রাম ও নদের মাঝখানে সাদা বকের সারির মতো যেন পালক ফুলিয়ে হাওয়ায় দুলছে কাশফুল। জলের ধারে, সবুজের ভেতর অনেকটা জায়গাজুড়ে সাদার মেলা বসিয়েছে এই কাশবন।

শরৎকাল এলেই মৌলভীবাজার শহরের রায়শ্রী-মনোহরকোনার এই এলাকায় কাশফুলের সৌন্দর্যের টানে আসা প্রকৃতিপ্রেমীদের ভিড় জমে। দুই থেকে আড়াই মাসব্যাপী কাশফুলের সাদা-ধূসর সাম্রাজ্য সবাইকে মুগ্ধ করে।

সম্প্রতি এক বিকেলে মনু নদের পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, রায়শ্রী-মনোহরকোনার প্রায় আধা কিলোমিটারজুড়ে কাশফুল ফুটেছে। লম্বা-চিরল সবুজ পাতার বুক থেকে বেরিয়ে আসা কাশফুল কোথাও থোকা থোকা, কোথাও ঠাস বোনা গুচ্ছ। হঠাৎ মনে হবে, সেখানে সাদা চাদর বিছানো। দক্ষিণ আকাশে তখন কিছু মেঘ জমেছে। থেমে থেমে মেঘও ডাকছে। নদের বুক ছুঁয়ে শীতল হাওয়া ভেসে আসছে কাশের বনে। হাওয়ায় দুলছে, নেচে উঠছে কাশফুল।

আশপাশের বিভিন্ন বয়সের মানুষ এই কাশবনে বেড়াতে এসেছে। কেউ মুঠোফোনে ছবি তুলছেন। কেউ আবার দু–চারটা কাশফুল ছিঁড়ে তোড়ার মতো তৈরি করছেন। আশপাশের শিশুরা কাশবনে খেলায় মেতে উঠেছে।

মৌলভীবাজার শহর থেকে কাশবনে বেড়াতে এসেছেন রনি পাল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘একসঙ্গে এত কাশফুল দেখতে বেশ লাগে। এখানে এলে শান্তি পাওয়া যায়।’

হবিগঞ্জের বাহুবল থেকে মৌলভীবাজার বেড়াতে এসেছেন সুজয় পাল। পরিচিতজনের সঙ্গে তিনি কাশবনে ঘুরতে এসেছেন। সুজয় পাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে এসে অনেক ভালো লাগছে। ছবি তুললাম। এখানে দারুণ সময় কাটল।’

এই কাশবন রয়েছে মনু নদের উত্তর পাশে। অন্য পাশে, দক্ষিণে মৌলভীবাজার জেলা শহর। মৌলভীবাজার শহর থেকে চাঁদনীঘাট মনু সেতু পেরিয়ে পূর্ব দিকে চাঁদনীঘাট-মনু ব্যারেজ সড়ক গেছে। সেই সড়ক ধরে দেড়-দুই কিলোমিটার পথ গেলেই ঘরবাড়ির ফাঁকে ফাঁকে কাশফুলের দেখা মেলে। মনু প্রকল্পের বাঁধ ঘেঁষে বাড়িঘর আছে। এসব বাড়ির পাশ দিয়ে নদের দিকে কয়েকটি মেঠো পথ চলে গেছে। মনোহরকোনা শ্মশানঘাট চিহ্নিত করে স্থাপিত সাইনবোর্ড থেকে দক্ষিণে মেঠো পথ ধরে নদের দিকে গেলে একদম কাশবনের মধ্যেই ঢুকে পড়া যায়।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, ভাদ্র মাসের শেষ দিকে কাশফুল ফুটতে শুরু করে। এ সময় পুরো এলাকা সাদা হয়ে যায়। কার্তিক মাস পর্যন্ত কাশফুল থাকে।

মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে করতে সন্ধ্যা গড়িয়ে এল। তখন দূর আকাশে চাঁদের আভা ফুটে উঠেছে। কখনো মেঘের আড়ালে সেই চাঁদ আটকা পড়ছে। সন্ধ্যার হালকা আঁধারে তখন মনু নদের জলে যেন টুকরা টুকরা রুপালি কাচ ভাসছে।

সন্ধ্যাবেলায় রায়শ্রী গ্রামের মো. শাহীন মাছ ধরতে মনু নদের এই এলাকায় বড়শি ফেললেন। এই নদের চরে খেলাধুলা করে তাঁর বেড়ে ওঠা। শাহীন বলেন, প্রায় তিন–চার বছর ধরে এখানে ফুল ফুটছে। বিকেল হলেই প্রচুর মানুষ ঘুরতে আসে। ছবি তোলে, ভিডিও করে। বৃষ্টির কারণে কয়েক দিন মানুষ একটু কম আসছে। ছুটির দিনে ভিড় বেড়ে যায়।

স্থানীয় সামাজিক সংগঠক রাজন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়া সুন্দর স্থানগুলো সংরক্ষণ করা দরকার।