সেতুর নির্মাণকাজ ৬ মাস বন্ধ, মানুষের দুর্ভোগ

ছয় মাস ধরে সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ। সম্প্রতি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার খারুভাজ নদের নির্মাণাধীন নেকিরহাট সেতু এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

খারুভাজ নদের নেকিরহাট ঘাটে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়েছিলেন এলাকার লোকজন। সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হলে উপজেলা সদরে যেতে তাঁদের আর দীর্ঘ পথ ঘুরতে হবে না। দুই বছর আগে ওই সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হয়নি। ছয় মাস ধরে সেখানে কাজ বন্ধ রয়েছে। এর ফলে ২ উপজেলার ২৫টি গ্রামের হাজারো মানুষ এখনো দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

রংপুরের তারাগঞ্জের হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের নেকিরহাট ও সদর উপজেলার মমিনপুর ইউনিয়নের খারুবাদ গ্রামের মধ্যবর্তী খারুভাজ নদের ওপর সেতুটির অবস্থান। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে সেতু নির্মাণের কাজ শেষ না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে রংপুর সদর ও তারাগঞ্জ উপজেলার ২৫টি গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করতে পারছেন না কৃষকেরা।

উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৫১ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৫ দশমিক ৫ মিটার প্রস্থ নেকিরহাট সেতু নির্মাণে ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অর্থায়নে সেতু নির্মাণের কাজ পায় চট্টগ্রামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স লিমিটেড নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চুক্তি অনুযায়ী সেতুটির কাজ ২০২৩ সালের ৩১ আগস্ট শেষ করার কথা। ওই সময়ের মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতু নির্মাণের কাজ শেষ করতে না পারায় সময় বাড়িয়ে চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ছয় মাস ধরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ রেখেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সেতু নির্মাণের কাজ বন্ধ রয়েছে। সেতুর পাশ দিয়ে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে হেঁটে নদ পারাপার হতে হচ্ছে মানুষকে। সেখানে অন্তত ২০ জনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এখানে সেতুর কাজ বন্ধ। ঠিকাদার নেই, সরকারি লোকজনেরও খোঁজ নেই। এই সেতু এখন গ্রামবাসীর কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নদের পূর্ব পাড়ে গড়ে ওঠা নেকিরহাট বাজারে কথা হয় ওই গ্রামের কৃষক জিয়াউর রহমানের সঙ্গে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, সেতুর নির্মাণকাজ শেষ না করায় দুই বছর ধরে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। উপজেলা সদরে ধান, পাট, সবজিসহ বিভিন্ন মালামাল পরিবহনে অতিরিক্ত পাঁচ-ছয় কিলোমিটার পথ ঘুরে তারাগঞ্জে আসতে হচ্ছে। এতে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি দুর্ভোগও পোহাতে হচ্ছে।

সেতুর পশ্চিম প্রান্তে কথা হয় শাহপাড়া গ্রামের মহুবার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এ্যালাও সেতুর আগাগোড়া বেরাই নাই। সেতুর কাজ শেষ না হওয়া কত অশান্তি। হামরা কৃষকরা কৃষিপণ্যের দাম পাওছি না। মানুষ অসুস্থ হইল গ্রামোত অ্যাম্বুলেন্স আইসোছে না। পায়ে হাঁটি নদী পার হবার নাগোছে।’

নেকিরহাট দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক আমিনুর ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীসহ মানুষজন হেঁটে নদ পারপার হচ্ছে। শুনেছি, এখানে গত বছরেই সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনো অর্ধেক কাজই হয়নি। সেতু নির্মাণ না হওয়ায় মানুষজন কষ্টে আছে। শিক্ষার্থীরা ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছে।’

নদ পারাপারের সময় কথা হয় দরগাপাড়া গ্রামের গৃহবধূ নাজমা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কদ্দিন যে নয়া সেতুখ্যান হইবে, তাক আল্লাহয় জানে। অসুস্থ মানুষজনোক ঘাড়োত করি ভাসে ওই পারোত নিগি হাসপাতালোত নিগার নাগে। বিয়াওবাদি হইলে গাড়ি নদীর ওপারোত থুইয়া সাগাই সোদার হাঁটি আইসে।’

হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কুমারেশ রায় বলেন, ‘ঠিকাদারকে বহুবার অনুরোধ করেছি, তিনি কথাও দিয়েছেন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে সেতু নির্মাণের কাজ শেষ না করায় নদের দুই পারের মানুষের কষ্ট থেকেই গেছে। আমাকে প্রতিনিয়ত জনগণের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে।’

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স লিমিটেডের মালিক ইউনুস আলী মুঠোফোনে বলেন, ‘নেকিরহাট সেতুর কাজটি অনেক পুরোনো দরে নেওয়া ছিল। উপকরণের দাম বাড়ায় কাজে দেরি হচ্ছে। সেতুটি নির্মাণে প্রায় ২০ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে।’

উপজেলা প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার বলেন, ঠিকাদারকে কাজ শেষ করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। সেতুর প্রায় ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এখন কাজ বন্ধ আছে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খুব দ্রুত কাজ শেষ করে সেতু হস্তান্তর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।