ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপির সম্মেলন পরশু, অংশ না নেওয়ার হুঁশিয়ারি একাংশের
আগামী পরশু শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন। কিন্তু জেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের একাংশের নেতা-কর্মীরা ওই সম্মেলনে অংশ না নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত জেলা বিএনপির ১৪টি ইউনিটের ভোটার তালিকা পরিচ্ছন্নভাবে প্রকাশ করা না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁরা সম্মেলনে যাবেন না। আওয়ামী লীগের দোসরদের দিয়ে বিএনপির রাজনীতি বেশি দিন চলতে পারে না।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা শহরের আবদুল কুদ্দুস মাখন পৌর মুক্তমঞ্চে বিএনপির ৩১ দফা দাবি বাস্তবায়নে আয়োজিত সমাবেশ থেকে জেলা বিএনপির একাংশের নেতা-কর্মীরা এই হুঁশিয়ারি দেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কমিটি ও নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধের জেরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপি দুই ভাগে বিভক্ত। জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হকের নেতৃত্বে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের বড় একটি অংশ এক পক্ষে। তাঁরা দুজনই জেলা বিএনপির ৩২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। আহ্বায়ক আবদুল মান্নান, সদস্যসচিব সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে আরেক পক্ষ সক্রিয়। প্রায় দুই বছর ধরে উভয় পক্ষ পৃথকভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করছে। সম্মেলন ঘিরে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তাপ ছড়িয়েছে।
আজকের সমাবেশে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লার সভাপতিত্বে এবং সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আজমের সঞ্চালনায় প্রধান বক্তার বক্তব্য দেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক। এ সময় সাবেক সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ বি এম মোমিনুল হক, সাবেক কোষাধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি তারেকুল ইসলাম খান, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান, জেলা যুবদলের সভাপতি শামীম মোল্লা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জেলা বিএনপি সূত্রে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিএনপির সম্মেলন উপলক্ষে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সহসম্পাদক আ জ ম মোরশেদ আল মামুনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করে সাত সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। ১৮ জানুয়ারি শনিবার বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সম্মেলনে সভাপতি পদে চারজন, সাধারণ সম্পাদক পদে তিনজন ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে তিনজন দলীয় মনোনয়ন কিনেছেন।
সমাবেশে হাফিজুর রহমান মোল্লা বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যে সম্মেলন হতে যাচ্ছে, সেই সম্মেলনে জেলার ১৪টি ইউনিটের মধ্যে ৮টি ইউনিটের ভোটার তালিকা করা হয়েছে। সেখানেও জাল–জালিয়াতি করা হয়েছে। বাকি ছয়টি ইউনিটকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাদ দেওয়ার অধিকার তাঁদের নেই। দলের কাছে তাঁদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। আমরা একটা জিনিসই চাই, ১ হাজার ৪১৪ ভোটার তালিকা সংস্কার করে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন ভোটার তালিকা যতক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চিত করে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারে, ততক্ষণ পর্যন্ত সম্মেলন যাতে না করতে পারে, আমরা রাজপথে প্রস্তুত থাকব। আমরা কোনো দয়া-দাক্ষিণ্য চাই না, ভোটের অধিকার চাই।’
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে হাফিজুর রহমান মোল্লা বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জাতীয়তাবাদী দল—তারা যাতে কোনো অন্যায় করতে না পারে, তাদের প্রতি দৃষ্টি দিয়ে শুদ্ধাচারের মাধ্যমে আগামী দিনের সম্মেলনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে দেন। আমরা ন্যায়ের পথে আছি। ন্যায়ের কার্যক্রমে আগামী দিনের সম্মেলনে প্রমাণ করে দিব, আমরাই আসল, তাঁরা নকল। আমরা কোনো অন্যায়, দুঃশাসন, স্বৈরাচার চাই না। আমরা স্বৈরাচারকে বিদায় করেছিলাম ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য। আজকে নব্য স্বৈরাচারেরা বিচরণ করছে।’
জহিরুল হক বলেন, ‘তারেক রহমানের নির্দেশে দলীয় কর্মসূচি করতে গিয়ে বারবার কারাগারে গিয়েছি, দীর্ঘদিন আমরা জেল খেটেছি। আমাদের প্রশ্ন, ওই চাটুকার, দালাল, চামচারা বিভিন্নভাবে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে নিজেদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য দৌড়াদৌড়ি করছে। তারা বিভিন্ন সময় আমাদের ওপর হামলা করেছে। আওয়ামী লীগের দোসরদের দিয়ে বিএনপির রাজনীতি বেশি দিন চলতে পারে না। আমাদের দাবি পরিষ্কার, স্বচ্ছ ভোটার তালিকার মাধ্যমে গোপন ব্যালটে কাউন্সিল হোক। এখানে কোনো স্বচ্ছ ভোটার তালিকা নেই। কেন্দ্রীয় বিএনপি আমাদের বলেছে, আজ বিকেলে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক আছে। আমরা আশা করি, তিনি বিষয়টিকে আমলে নিয়ে একটা সুষ্ঠু সমাধান দেবেন।’
জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কারও ব্যক্তিগত কথায় বিএনপি চলে না। বিএনপি একটি সাংগঠনিক দল, সেভাবেই চলে। সম্মেলনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ১৮ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন।’