কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের সামনে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, অস্ত্র প্রদর্শন

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সামনে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সময় একজনের হাতে দেশীয় অস্ত্র দেখা যায়। বোরবার দুপুরে নগরের কান্দিরপাড় এলাকায় রানীর দিঘীর পাড়ে কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শাখার সামনেছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সামনে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অন্তত চারজন আহত হয়েছেন। এ সময় দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শনের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। রোববার দুপুরে নগরের কান্দিরপাড় এলাকায় রানীর দীঘির পাড়ে কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শাখার সামনে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের ধারণা, সংঘর্ষে জড়িত দুই পক্ষ কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য।

সংঘর্ষে আহত ব্যক্তিরা হলেন মোস্তাফিজুর রহমান, অনয় দেবনাথ, মো. মাহিন ও মো. রিজভী। তবে তাঁদের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, আহত ব্যক্তিরা কুমিল্লার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থী।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, রোববার সকালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শাখার ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী জিসান ও তাহফিদ হোসেনের সঙ্গে একই প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীন সিফাতের কথা–কাটাকাটি হয়। এ ঘটনার সময় সিফাত অপর শিক্ষার্থী তাহফিদের ওপর হামলা করেন এবং জিসানকে মারধরের হুমকি দেন। পরে তাহফিদ ও সিফাতের মধ্যে মারামারি হয়। একপর্যায়ে সিফাত বিভিন্ন কলেজে থাকা তাঁর বন্ধু ও সঙ্গীদের মুঠোফোনে কল দিলে তাঁরাও কলেজের সামনে দীঘির পাড়ে অবস্থান নেন। পাশাপাশি জিসান ও তাহফিদের পক্ষেও আরেক পক্ষ অবস্থান নেয়।

স্থানীয় সূত্রের ভাষ্য, দুপুর ১২টার পর কলেজের শিক্ষার্থীরা বের হওয়া শুরু করলে সিফাত তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে অপর পক্ষের ওপর হামলা চালান। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় একজনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র এবং কয়েকজনের হাতে দেশীয় অস্ত্র দেখা গেছে। সংঘর্ষে আহত চারজনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়।

এদিকে রোববার সন্ধ্যায় এ ঘটনার ১২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, এক তরুণ হাতে ধারলো রামদা নিয়ে অন্য তরুণদের ধাওয়া করছেন। এ সময় এক তরুণের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেছে। তবে তাঁর চেহারা ভিডিওতে দেখা যায়নি।

রোববার রাত আটটার দিকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবুল বাসার ভূঁঞা বলেন, ‘যারা সংঘর্ষে জড়িয়েছে, তারা কিশোর গ্যাং বলে জানতে পেরেছি। আমরা এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করব। তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনায় জড়িত আমাদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় এরই মধ্যে আমরা প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছি।’

কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহিনুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছার আগেই সংঘর্ষে জড়িত ব্যক্তিরা পালিয়ে যায়। এরপর নগরে অভিযান চালিয়ে জড়িত সন্দেহে একজনকে আটক করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, দুই পক্ষ কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের আটক করতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কাজ শুরু করেছে জানিয়ে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সাইফুল মালিক প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরাই এই ঘটনায় জড়িত, তাঁদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। এ ছাড়া সেখানে আগ্নেয়াস্ত্রের কোনো ব্যবহার হয়েছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।