স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর নৌকার সমর্থকদের হামলা, আহত ৭

নেত্রকোনার কলমাকান্দায় স্বতন্ত্র প্রার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস আরার সমর্থকদের ওপর নৌকার প্রার্থীদের হামলায় সাতজন আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার রাতে উপজেলার চকবাজার এলাকায়
ছবি: সংগৃহীত

নেত্রকোনা-১ (কলমাকান্দা-দুর্গাপুর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোশতাক আহমেদের সমর্থকেরা স্বতন্ত্র প্রার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস আরার সমর্থকদের ওপর হামলা করেছেন। এ ঘটনায় অন্তত সাতজন আহত হন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী লোকজন নিয়ে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

গতকাল রোববার দিবাগত রাত সোয়া দুইটার দিকে কলমাকান্দা উপজেলার চকবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপর পুলিশ অভিযান চালিয়ে উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর আত্মীয় আবদুল কুদ্দুছকে আটক করে।

হামলায় আহত ব্যক্তিরা হলেন—কলমাকান্দা উপজেলার বিষমপুর গ্রামের আনোয়ার ভূঁইয়া (২২), শিলার কাকুরি গ্রামের রাজু মিয়া (৪৫), মই পুকুরিয়া গ্রামের আবদুল গনি ভূঁইয়া (৫৫), মামুন ভূঁইয়া (২৪), মো. কামরুজ্জামান (৩৬), বেনুয়া গ্রামের জুলহাস মণ্ডল (৩৫)। আরেকজনের নাম জানা যায়নি।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল বিকেল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস আরার কর্মী-সমর্থকেরা বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী প্রচারণা চালান। পরে রাত একটার দিকে তাঁরা দুর্গাপুর পৌর শহরের কাছারি মোড় থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। পথে কলমাকান্দার নাজিরপুর ইউনিয়নের চকবাজার এলাকায় পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা মোটরসাইকেল থামিয়ে লোহার রডসহ দেশি অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সাতজন সমর্থক আহত হন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। ঘটনার পর পুলিশ রাত সাড়ে তিনটার দিকে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুছকে আটক করে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস আরা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক। তিনি এই আসনের তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা জালাল উদ্দিন তালুকদারের একমাত্র মেয়ে। দ্বাদশ নির্বাচনে অংশ নিতে তিনি দুর্গাপুর উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

জান্নাতুল ফেরদৌস আরা আজ সোমবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার পর থেকেই নৌকার প্রার্থী ও তাঁর কর্মী–সমর্থকেরা আমার প্রচারে বাধা, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, প্রচার মাইক ফেলে দেওয়া, নির্বাচনী ক্যাম্প বসতে বাধা, হুমকি, উসকানিমূলক বক্তব্য, কর্মী–সমর্থকদের ওপর হামলাসহ একের পর এক আচরণবিধি লঙ্ঘনের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছেন। এসব বিষয় নিয়ে থানায় মামলাসহ সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।’

জান্নাতুল ফেরদৌস আরা আরও বলেন, ‘গতকাল নৌকার প্রার্থীর আত্মীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুছ ও তাঁর ভাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুল ওয়াদুদের নেতৃত্বে আমার কর্মী–সমর্থকদের হামলা করে আহত করেন। পরে পুলিশ ও আমি নিজে ঘটনাস্থল থেকে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে আমি বাদী হয়ে এখন থানায় মামলা করেছি।’ এজাহারে ছয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

হামলার শিকার রাজু মিয়া বলেন, ‘গত রাতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা দেশি অস্ত্র নিয়ে ১০ থেকে ১২টি মোটরসাইকেলে এসে আমাদের মোটরসাইকেল থামিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ধাওয়া করেন। এ সময় জীবন বাঁচাতে মোটরসাইকেল ফেলে দৌড় দিই আমরা। হামলাকারী ব্যক্তিরা মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে আমাদের বেধড়ক মারধর করেন। আমরা শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও জানে বেঁচে আসছি। এখন আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোশতাক আহমেদের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামানের দাবি, প্রতিটি অভিযোগের বিষয়ে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ লুৎফুল হক আজ সকাল সোয়া ১০টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, হামলার ঘটনায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানকে আটক করা হয়েছে। মামলাটি নথিভুক্ত করে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে। অন্যদেরও আটকের চেষ্টা চলছে।