নাঙ্গলকোটে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার ৩
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার হেসাখাল ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সেলিম ভূঁইয়াকে (৪৫) পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ৭৯ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় নাঙ্গলকোটে বিএনপির রাজনীতিতে এক পক্ষের নেতৃত্ব দেওয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়াকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। যদিও ঘটনার পর থেকে মোবাশ্বেরের দাবি, তিনি ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানেন না।
আজ রোববার দুপুরে নিহতের ভাই আবদুর রহিম বাদী হয়ে থানায় মামলাটি করেন। মামলায় ৩৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৩০ থেকে ৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় আজ দুপুরে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে ফজলুল হক। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার কাশীপুর গ্রামের ফারুক হোসেন, গোত্রশাল গ্রামের আফছার ও একই গ্রামের মো. হেলাল। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের সবাই মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়ার অনুসারী।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নাঙ্গলকোটে বিএনপির রাজনীতিতে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল গফুর ভূঁইয়ার সঙ্গে নাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়ার দীর্ঘদিন ধরে দলীয় কোন্দল চলে আসছে। শনিবার হামলায় নিহত স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা সেলিম ভূঁইয়া সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল গফুর ভূঁইয়ার অনুসারী। মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়ার অনুসারীদের বিরুদ্ধে ওই হামলা চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোববার থানায় হওয়া মামলার আসামিদের প্রায় সবাই মোবাশ্বের ভূঁইয়ার অনুসারী। তাঁদের মধ্যে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলামকে মামলায় ৫ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
গতকাল উপজেলার বাঙ্গড্ডা বাজার এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা সেলিম ভূঁইয়াকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। নিহত সেলিম ভূঁইয়া হেসাখাল দক্ষিণ খিলপাড়া এলাকার আবদুল খালেকের ছেলে। তিনি চার সন্তানের জনক।
এদিকে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা সেলিম হত্যার বিচারের দাবিতে আজ বিকেলে নাঙ্গলকোট থানার সামনে বিক্ষোভ করেছেন বিএনপি নেতা গফুর ভূঁইয়ার অনুসারীরা।
দলীয় ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গতকাল বিকেলে উপজেলার বাঙ্গড্ডা স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে মোবাশ্বের আলমের অনুসারী যুবদলের কর্মিসভা ছিল। সভা কেন্দ্র করে বাঙ্গড্ডা বাজার এলাকায় তাদের নেতা-কর্মীরা সংগঠিত ছিলেন। একই সময়ে গফুর ভূঁইয়ার একটি মতবিনিময় সভা ছিল উপজেলার কাকৈরতলা এলাকায়। দুপুরে গফুর ও তাঁর অনুসারীরা উপজেলার রায়কোট দক্ষিণ ইউনিয়নে একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে ছিলেন। সেখান থেকে মোটরসাইকেলে করে কাকৈরতলা যাওয়ার সময় মোবাশ্বের আলমের পক্ষের কয়েকজন বাঙ্গড্ডা বাজার এলাকায় গফুরের কয়েকজন অনুসারীর ওপর হামলা চালান। এতে দুপক্ষের নেতাদের মধ্যে মারামারি হয়। এ সময় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা সেলিম ভূঁইয়াকে ব্যাপক পেটানো হয়। তিনি গুরুতর আহত হন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার পর থেকেই গফুর ভূঁইয়ার দাবি, সেলিম ভূঁইয়াকে হত্যার সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন মোবাশ্বের ভূঁইয়া ও উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম।
অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘শনিবার আমার এবং গফুর ভূঁইয়ার একই সামাজিক অনুষ্ঠানে দাওয়াত ছিল। তিনি খেয়ে বের হয়েছেন, এমন সময় আমরা সেখানে প্রবেশ করেছি। বাঙ্গড্ডায় কী হয়েছে, আমি জানিও না। পরে সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিষয়টি শুনেছি। রাজনৈতিক বিরোধের কারণে বিষয়টি নিয়ে মিথ্যাচার করে এখন সাজানো মামলা করা হয়েছে।’
এ ঘটনায় আহত ও গফুর ভূঁইয়ার অনুসারী আবুল কালাম বলেন, ‘আমরা কাকৈরতলায় বিএনপির মতবিনিময় সভায় যাওয়ার পথে বাঙ্গড্ডা পশ্চিম বাজার পৌঁছালে আগে থেকে মোবাশ্বেরের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এ সময় আমরা তাদের দেখে মোটরসাইকেল ঘোরানোর চেষ্টা করলে ৭০-৮০ জনের একটি গ্রুপ আমাদের বেধড়ক পেটাতে থাকে। একপর্যায়ে পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আলীর মোটরসাইকেলের পেছনে বসে থাকা সেলিম ভূঁইয়া দৌড় দিলে তাঁকে ঘেরাও করে লাঠিসোঁটা ও হাতুড়ি দিয়ে পেটাতে থাকে। তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করে তারা চলে যায়।’
নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে ফজলুল হক বলেন, এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছেন। মামলার প্রধান আসামি মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া। পুলিশ পৃথক স্থানে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। পাশাপাশি পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করছে।