ব্রি-৯৮ জাতের গাছে ধরা সোনালি ধান। গত বুধবার চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার মোক্তারপুরে
ছবি: প্রথম আলো

আউশ মৌসুমের নতুন ধান ব্রি-৯৮ চাষ করে প্রথমবারেই ভালো ফলন পেয়েছেন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কৃষকেরা। ইতিমধ্যে খেত থেকে ধান সংগ্রহ শুরু করেছেন তাঁরা। সাধারণত আউশ মৌসুমের অন্যান্য জাতের ধানে ১৬ থেকে ১৭ মণ ফলন হলেও নতুন এই ধানে বিঘাপ্রতি গড়ে ২২ মণ ফলন পাওয়ায় কৃষকের মুখে দেখা দিয়েছে চওড়া হাসি। কম সময়ে অধিক ফলন হওয়ায় অনেকেই এই ধানটিকে আশাজাগানিয়া বলে মন্তব্য করছেন।

দামুড়হুদা উপজেলার সদর ইউনিয়নের মোক্তারপুরে কৃষক জগবন্ধু বোসের জমি থেকে মঙ্গলবার ধানের নমুনা শস্য কর্তনের মধ্য দিয়ে চলতি আউশ মৌসুমে আনুষ্ঠানিকভাবে খেতের ধান সংগ্রহ শুরু হয়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা ও দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তারসহ কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা ওই দিন মোক্তারপুরে উপস্থিত ছিলেন।

চুয়াডাঙ্গায় আউশ মৌসুমে নতুন জাতের এই ধান কৃষকেরা প্রথমবারের মতো চাষ করেছে। এই ধান চাষের খরচ কম। উৎপাদনও ভালো। 

বুধবার সরেজমিন দেখা যায়, দামুড়হুদা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে কৃষকেরা খেত থেকে ব্রি-৯৮ ধান সংগ্রহ করছেন। কোথাও কোথাও শ্রমিকেরা দল বেঁধে গান গেয়ে গেয়ে কাঁচি দিয়ে ধান কাটছেন। আবার কোথাও কোথাও কম্বাইন হার্ভেস্টারে চলছে ধান কাটার কাজ। মোক্তারপুর গ্রামে খেতের পাশে দাঁড়িয়ে কথা হয় জগবন্ধুর বোসের সঙ্গে। 

জগবন্ধু জানান, মোক্তারপুর ও কানাইডাঙ্গা গ্রামে ২০১৭ সাল থেকে প্রতিবছর আউশ মৌসুমে ৪০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করে আসছেন। গত বছর পুরো জমিতে ব্রি-৪৮ আবাদ করেছিলেন। এ বছর ২০ বিঘা জমিতে ব্রি-৪৮ এবং ২০ বিঘা জমিতে ব্রি-৯৮ আবাদ করেছেন।

জগবন্ধু বলেন, ‘কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় এবার ব্রি-৯৮ ধানের বীজ সংগ্রহের পর চারা তৈরি করে মে মাসের শেষ সপ্তাহে জমিতে রোপণ করেছিলাম। ধান পাকার পর অর্ধেকের বেশি কাটা শেষ হয়েছে। প্রতি বিঘায় ব্রি-৪৮ ধানে সর্বোচ্চ ১৬ মণ পর্যন্ত ফলন পেলেও ব্রি-৯৮ ধানে ২২ থেকে ২৩ মণ পাওয়া যাচ্ছে। আগামী মৌসুমে পুরো ৪০ বিঘা জমিতেই ব্রি-৯৮ জাতের ধান চাষ করব। স্থানীয় কৃষকেরা নতুন জাতের এই ধান আবাদের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বীজ চেয়েছেন অনেকেই।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জগবন্ধু ছাড়াও মোক্তারপুরের কাজল মিয়া সাড়ে পাঁচ বিঘা ও শরিফুল ইসলাম তিন বিঘা, আরামডাঙ্গার আতিয়ার রহমান তিন বিঘা, কার্পাসডাঙ্গার সিরাজুল ইসলাম পাঁচ বিঘা ও বাঘাডাঙ্গার মতি মণ্ডল চার বিঘা জমিতে এবার ব্রি-৯৮ ধান চাষ করেছেন। তাঁরাও এই জাতের ধানের কাঙ্ক্ষি০ত ফলন পেয়ে খুশি। 

সিরাজুল ইসলামের খেতের পাশে দাঁড়িয়ে কথা হয় চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার খেজুরতলা গ্রামের কৃষক তসলিম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অ্যাত দিন আমরা খাটোবাবু ধানই আবাদ করে আসচেলাম। অনেকের কাচে শুনে মুক্তারপুরি ব্রি-৯৮ ধান দেকতি আইচি। ধানডা খুবই চিকন আর লম্বা, চিটে নেই। ছোমনের বার আমি পাঁচ বিগে জমিতি এই ধান আবাদ কইরব।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, উন্নত জাতের অভাব এবং খরা, বন্যা ও অতিবৃষ্টি এবং তুলনামূলক ফলন কম হওয়ায় আউশ ধান চাষ দিন দিন কমছিল। দেশের কৃষিবিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টায় আউশ মৌসুমের জন্য উদ্ভাবিত ব্রি-৯৮ খুবই সম্ভাবনায়। সাধারণত অন্যান্য জাতের ধান বীজতলা থেকে চারা তুলে লাগানোর পর ১০৫ থেকে ১২০ সময় লাগে। সেখানে ব্রি-৯৮ ধান ৯০ থেকে ১০০ দিনে কৃষক ঘরে তুলতে পারছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, ব্রি-৯৮ জাতের ধান উদ্ভাবন করার পর স্থানীয় কৃষকদের উৎসাহ দেওয়া হয়। চলতি মৌসুমেই উপজেলায় প্রথম আবাদ শুরু হয়েছে। কৃষকেরা ৮৯১ হেক্টরে আবাদ করে ভালো ফলন পেয়েছেন। এই ধানে সেচ ও সার কম রাগে। এতে পোকামাকড়ের আক্রমণও কম হয়। ধানের আকার চিকন ও লম্বা এবং উৎপাদনে সময় কম লাগায় কৃষকেরা এই জাতের ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।