‘মা, আমরা এখন মুক্ত, তাড়াতাড়িই তোমার কাছে ফিরে আসব’

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের ছকরিকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মো. দেলোয়ার হোসেন ও হাসিনা বেগম
ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ ১ মাস ২ দিন পর জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে তারেকুল ইসলাম (২৯) প্রথম কলটি করেন তাঁর মাকে। তিনি তাঁর মা হাসিনা বেগমকে বলেন, ‘মা, আমরা এখন মুক্ত, তাড়াতাড়িই তোমার কাছে ফিরে আসব।’

সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পাওয়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর থার্ড ইঞ্জিনিয়ার তারেকুল ইসলাম। তিনি ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের ছকরিকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মো. দেলোয়ার হোসেন ও হাসিনা বেগমের ছেলে। তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট তারেকুল।

রোববার সন্ধ্যা সাতটার দিকে মুঠোফোনে তারেকুলের মা বলেন, ‘ছেলেটা এক মাস জিম্মি থাকার পর মুক্তি পেয়েছে—এই খবর যখন ছেলের মুখে শুনলাম, তখন আমার বুকটা ভইরা গেছে। ছেলে এখনো আমার কাছে আসে নাই, তবে তার মুক্তির খবর শুনে তাই মনটা ভইরা গেছে। ছেলে যেদিন আমার কাছে ফিরে আসবে, জানি না সেদিন খুশিতে আমার কী অবস্থা হয়। আমার মনের আকুতি আল্লাহ শুনেছে।’

হাসিনা বেগম বলেন, ছেলে মুক্তি পাওয়ার পর বাবার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে কল করে মুক্তির খবর দেয়। তারেকুল তাঁদের বলেন, ওখান থেকে দুবাই পৌঁছাতে আট দিন সময় লাগবে। এরপর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুবাই থেকে বিমানে অথবা ওই একই জাহাজে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে বাড়িতে ফিরবেন তাঁরা।

তারেকুল ইসলাম (২৯)
ছবি: সংগৃহীত

তারেকুলের বাবা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ছেলে জিম্মি হওয়ার পর যখন মাঝেমধ্যে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করত, তখন ছেলে বেঁচে আছে জেনে ভালো লাগত। কিন্তু ছেলে জিম্মি, দস্যুদের হাতে বন্দী—এ কথা ভেবে মনের ভেতর হাহাকার নেমে আসত। এখন ছেলে মুক্ত। মনে হচ্ছে বুকের ভেতরে চাপা দিয়ে রাখা বড় একটি পাথর সরে গেছে।

পরিবারের সদস্যরা বলেন, বাড়ির পাশের ছকরিকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ চুকিয়ে ২০০৪ সালে ঢাকায় চলে যান তারেকুল। ২০০৯ ও ২০১১ সালে যথাক্রমে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমিতে। পড়াশোনা শেষ করে ২০১৭ সালে চাকরি নেন চায়না কোম্পানির একটি জাহাজে। এরপর আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ঘুরে গত বছরের শেষ দিকে চাকরি নেন কেএসআরএম গ্রুপের এই জাহাজে। তারেকুল বিয়ে করেছেন নাটোরের গুরুদাসপুর এলাকায়। তাঁর স্ত্রীর নাম নুসরাত জাহান (২১)। তাঁদের তানজিহা ইসলাম নামে এক বছর বয়সী একটি মেয়ে আছে।