‘আপনার মিটার চুরি হয়েছে, মিটার পেতে কল করুন...’

উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বেড়গঙ্গরামপুর গ্রামের কৃষক সজিব হোসেনের মিটার চুরির পর এই চিরকুট রেখে যায়
ছবি: প্রথম আলো

নাটোরের গুরুদাসপুরে সম্প্রতি বৈদ্যুতিক মিটার চুরি যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। একশ্রেণির অসাধু মানুষ রাতে কৃষক ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মিটার খুলে নিয়ে যাচ্ছে। যাওয়ার সময় সেখানে মুঠোফোন নম্বর কাগজে লিখে সাঁটিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। সেই নম্বরে কল করা হলে বিকাশে চাওয়া হচ্ছে টাকা। পরে দর–কষাকষি করে টাকা পাঠিয়ে ভুক্তভোগী কেউ কেউ মিটার ফেরত পাচ্ছেন।

নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ (গুরুদাসপুর) কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, তাদের আওতাধীন এলাকা থেকে গত দুই সপ্তাহে ২০-২২টি বৈদ্যুতিক মিটার চুরি হয়েছে। চুরি যাওয়া প্রতিটি মিটারের দাম ১১ হাজার থেকে ২৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। ভুক্তভোগীরা এ নিয়ে দপ্তরে অভিযোগ করেছেন। পরে এসব মিটার চুরির ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হলেও এ চক্রের সঙ্গে জড়িত কাউকে আটক বা চুরি যাওয়া মিটারগুলো উদ্ধার করা যায়নি।

উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বেড়গঙ্গরামপুর গ্রামের কৃষক সজীব হোসেনের সেচপাম্পের মিটারটি চুরি হয় গত মঙ্গলবার রাতে। পরের দিন সকালে গিয়ে মিটারের নিচে একটি চিরকুট দেখতে পান। একটি মুঠোফোন নম্বর দিয়ে তার ওপরে লিখে রাখা হয়েছে, ‘আপনার মিটারটি চুরি হয়েছে, মিটার পেতে কল করুন...’। কৃষক সজীবের মতো একই গ্রামের আরও তিন ব্যবসায়ীর বৈদ্যুতিক মিটার চুরি গেছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর টাকা খরচ করে একটি বৈদ্যুতিক মিটারের সংযোগ পেতে হয়েছে তাঁদের। মিটার চুরির পর আবারও নতুন মিটারের সংযোগ নিতে তাঁদের ১১ হাজার থেকে ২৩ হাজার টাকা গুনতে হবে। স্থানীয় বিদ্যুৎ কার্যালয়ে গিয়েও হয়রানিতে পড়তে হয়।

কৃষক সজীব হোসেন জানান, সেচ প্রকল্পের জন্য দুই বছর আগে সংযোগটি নিয়েছিলেন তিনি। গত এক বছরে চারবার চুরি হয়েছে তাঁর মিটার। সর্বশেষ চুরি যাওয়া মিটারটি ফেরত পেতে চোরের রেখে যাওয়া চিরকুটের নম্বরে ফোন দিয়েছিলেন। অপর প্রান্ত থেকে মিটার ফেরত দিতে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করা হয়েছিল। অনেক অনুরোধের পর ১ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারিত নম্বরে বিকাশ করেছিলেন সজীব। পরের দিন পাশের একটি খড়ের পালার ভেতর চুরি যাওয়া মিটারটি পেয়েছিলেন তিনি।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষতিগ্রস্ত দুই কৃষক প্রথম আলোকে বলেন, চুরি যাওয়া মিটার ফেরত পেতে চিরকুটের নম্বরে কথা বলেছিলেন এ চক্রের সদস্যদের সঙ্গে। মুঠোফোনের অপর প্রান্ত থেকে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করা হয়েছিল, অনেক দর–কষাকষি করেও দাবিকৃত টাকা কমাতে পারছিলেন না।

ওই দুই কৃষক জানান, দর–কষাকষির কারণে চক্রের সদস্যরা বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন, ‘আরে ভাই, এত পরে ফোন দিছেন কেন? চারজন মানুষ (চোর) সারা রাত পরিশ্রম করেছি, কম হলে হবে না।’ এক হাজার কমিয়ে চার হাজার টাকা বিকাশে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিল চোর চক্রের সদস্যরা। পরে দুই হাজার টাকা বিকাশে পরিশোধের পরদিন বাড়ির পাশের একটি লেবুবাগানের খড়ের গাদায় মিটার পেয়েছিলেন ভুক্তভোগী দুজন।

মিটার চুরি যাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ (গুরুদাসপুর জোনাল অফিস) এর উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) আবদুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, নেশাগ্রস্ত বা হতাশাগ্রস্ত তরুণ-যুবকেরা নিজেদের সামান্য চাহিদা মেটানোর জন্য মিটার চুরির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। এ চক্রের সঙ্গে পেশাদার চোর চক্রের কেউ জড়িত নয়। কারণ, চাহিদা মিটলেই চুরি যাওয়া মিটারগুলো মিলছে।

গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনোয়ারুজ্জামান সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, চোরদের রেখে যাওয়া চিরকুটের মুঠোফোন নম্বরগুলো ভুয়া আইডিতে করা। তথ্যপ্রযুক্তিতে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে। এরপরও চোরদের শনাক্তে কাজ করছে পুলিশ।