বালু তোলা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ধুনট থানায় আ.লীগ ও যুবলীগ নেতার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
বগুড়ার ধুনট উপজেলায় যমুনা নদী থেকে বালু উত্তোলন নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের দুই নেতা একে অপরের বিরুদ্ধে থানায় পাল্টাপাল্টি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় দেওয়া লিখিত অভিযোগে আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলামের বাবা ফজলুল হক দাবি করেছেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে বাধা দেওয়ায় যুবলীগ নেতা বেলাল হোসেন ও তাঁর সহযোগীরা তাঁর ছেলেকে পিটিয়ে আহত করেছেন। তবে এর আগে একই দিন বিকেলে রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বেলাল হোসেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রফিকুল ইসলাম উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বেলাল হোসেন উপজেলা যুবলীগের ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক।
লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যুবলীগ নেতা বেলাল হোসেন ৪০ লাখ টাকায় উপজেলার যমুনা নদীর চৌবেড় মৌজার বালু মহালটি জেলা পরিষদ থেকে ছয় মাসের জন্য ইজারা নিয়েছেন। তিনি ২০২২ সালের ২ অক্টোবর থেকে সেখানে বালু উত্তোলন করছেন। গতকাল দুপুরের দিকে তিনি বালু উত্তোলন করতে গেলে আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম তাঁকে বাধা দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বেলাল হোসেন ও তাঁর লোকজন রফিকুল ইসলামকে মারধর করে আহত করেন। আহত রফিকুল ইসলাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এ ঘটনায় রফিকুলের বাবা ফজলুল হক বাদী হয়ে বেলালসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, বেলাল হোসেন ইজারাকৃত মহালের বাইরে গিয়ে জোর করে বালু উত্তোলন করছিলেন। এতে তাঁদের ফসলি জমি ও বাড়িঘর ভেঙে যমুনা নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। মহালের বাইরে বালু তুলতে বাধা দেওয়ায় বেলাল ও তাঁর লোকজন তাঁর ছেলেকে পিটিয়ে আহত করেছেন। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের যমুনা নদীর বানিয়াজান-কৈয়াগাড়ি এলাকায় এ মারধরের ঘটনা ঘটে।
তবে এর আগে বিকেল ৫টার দিকে যুবলীগ নেতা বেলাল বাদী হয়ে রফিকুলসহ চারজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, রফিকুল ও তাঁর লোকজন দীর্ঘদিন ধরে বেলালের কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। তাঁদের চাঁদার টাকা না দেওয়ায় গতকাল দুপুরে বালু উত্তোলনে বাধা দেওয়া হয়। এ সময় রফিকুল ও তাঁর লোকজন বালু তোলায় নিয়োজিত শ্রমিকদের মারধর এবং বালু তোলার মেশিন এবং নৌকা ভাঙচুর করেছেন।
রফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেলাল যমুনা নদীর ইজারাবহির্ভূত এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করছিলেন। এতে আবাদি জমি, বসতভিটাসহ বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়ে গেছে। এ কারণে এলাকার লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে বাধা দিলে বেলাল ও তাঁর লোকজন আমাদের পিটিয়ে আহত করেছেন। আর চাঁদা চাওয়ার অভিযোগটি সঠিক নয়। বেলাল আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন।’
তবে বেলাল হোসেনের দাবি, ইজারাকৃত মৌজার বাইরে গিয়ে বালু উত্তোলন করা হয়নি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রফিকুলকে তিনি বা তাঁর লোকজন কেউ মারধর করেননি। উল্টো চাঁদার টাকার না পেয়ে রফিকুল ও তাঁর লোকজন শ্রমিকদের মারধর করেছেন বলে দাবি করেন তিনি। একই সঙ্গে তাঁরা শ্যালো মেশিন ও নৌকা ভাঙচুর করেছেন।
ধুনট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আসাদুজ্জামান বলেন, যমুনা নদী থেকে বালু তোলাকে কেন্দ্র করে মারধর ও চাঁদাবাজির বিষয়ে পাল্টাপাল্টি দুটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ দুটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।