ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়ার ১০ ঘণ্টা পর ফিরলেন চনপাড়ার ইউপি সদস্য শমসের

ইউপি সদস্য শমসের আলী
ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার অপরাধ সাম্রাজ্য হিসেবে পরিচিত চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রের ইউপি সদস্য শমসের আলীকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে তুলে নেওয়ার ১০ ঘণ্টা পর তিনি বাড়ি ফিরেছেন। আজ রোববার বিকেল চারটার দিকে বাড়ি ফেরেন শমসের। তবে কে বা কারা তাঁকে তুলে নিয়েছিল, এ বিষয়ে কিছু বলছেন না শমসের। বাড়ি ফেরার পর স্থানীয় লোকজন তাঁকে নিয়ে এলাকায় একটি মিছিল বের করেছেন।

এর আগে সকাল ছয়টায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিচয়ে শমসের আলীকে একটি নম্বরবিহীন সাদা মাইক্রোবাসে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। এ সময় স্থানীয় ব্যক্তিরা বাধা দিলে সাদাপোশাকধারী ব্যক্তিরা ছররা গুলি ছোড়েন। এতে অন্তত দুজন গুলিবিদ্ধ হন।

গুলিবিদ্ধ দুজন হলেন মো. রাজু ও আবদুল খালেক। তাঁরা চনপাড়ারই বাসিন্দা। তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া দুজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গুলিবিদ্ধ দুজন হাসপাতালে এসেছিলেন। তাঁদের চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) তরিকুল ইসলামের দাবি, তাঁরা চনপাড়ার এমন কোনো অভিযান চালাননি। এই ঘটনার বিষয়েও তাঁদের জানা নেই। বেলা দুইটায় রূপগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আতাউর রহমান জানান, সাদাপোশাকে তুলে নেওয়া ও গুলি ছোড়ার বিষয়ে তাঁরা অবগত আছেন। তবে কারা তুলে নিয়েছেন, বিষয়টি তাঁদের জানা নেই। খবর পেয়ে পুলিশ চনপাড়ায় গিয়ে কাউকে পাননি। এ বিষয়ে পুলিশ কাজ করছে।

শমসের আলী উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড (চনপাড়া) সদস্য এবং চনপাড়া ইউনিয়ন (সাংগঠনিক ইউনিয়ন) আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। আজ সকালে শমসের আলীর বড় ভাই মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন,  সকালে শমসের চনপাড়ার ৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার বাড়িতে ঘুমিয়েছিল। এ সময় সাদাপোশাকে একদল লোক এসে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চান। শমসের তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে ঘর থেকে বের হলে সাদাপোশাকধারীরা তাঁকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় পরিবারের লোকজন চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে সাদাপোশাকধারীদের বাধা দেন।

শমসের আলীকে তুলে নেওয়ার পর তাঁর অনুসারীরা এলাকায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। ঘটনার অন্তত তিনজন প্রত্যক্ষদর্শী এই প্রতিবেদককে জানান, শমসের আলীকে তুলে নেওয়ার সময় সাদাপোশাকধারীরা শুরুতে নিজেদের কোনো পরিচয় দেননি। স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধস্তাধস্তি ও বাগ্‌বিতণ্ডার পর তাঁরা নিজেদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দেন। এ সময় শমসেরের অনুসারীরা বিভিন্ন ধরনের যানবাহন জড়ো করে সড়ক অবরোধ করেন। সাদাপোশাকধারীদের ওপর ইটপাটকেল ছোড়েন। এ সময় ছররা গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে। শমসের আলীকে তুলে নেওয়া মাইক্রোবাসটিতে কোনো নম্বর প্লেট ছিল না। গাড়িটির নম্বর প্লেটের স্থানে ইঞ্জিন নম্বর লেখা একটি স্টিকার সাঁটানো ছিল।

চনপাড়ার কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, চনপাড়ার অপরাধ সাম্রাজ্যের একসময়ের নিয়ন্ত্রক সাবেক ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা বজলুর রহমানের মৃত্যুর পর হওয়া উপনির্বাচনে শমসের আলী ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন। তার পর থেকে তিনিই চনপাড়ার নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠেন। সম্প্রতি এলাকার ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে স্থানীয় একটি পক্ষের সঙ্গে তাঁর বিরোধ চলছিল।