অবাধে বালু উত্তোলন, ব্যাপক ভাঙনের শঙ্কা 

  • বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িতরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদও করছেন না।

  • পাইপের মাধ্যমে ১০০ থেকে ১৫০ গজ দূরের বিশাল পুকুরে ফেলা হচ্ছে এসব বালু।

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার বাউলিকান্দা এলাকায় পদ্মা নদীর তীরে খননযন্ত্র দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে নদী তীরবর্তী কৃষিজমি ও বসতবাড়ি ভাঙনের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। আরুয়া ইউনিয়নের বাউলিকান্দা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার বাউলিকান্দা এলাকায় পদ্মা নদীতে খননযন্ত্র দিয়ে মহা আয়োজনে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। এতে নদী তীরবর্তী বসতবাড়ি ও কৃষিজমি ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। বালু উত্তোলনের সঙ্গে প্রভাবশালীরা জড়িত থাকায় এর প্রতিবাদ করতেও ভয় পাচ্ছেন তাঁরা।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আরুয়া ইউনিয়নের বাউলিকান্দা এলাকায় পদ্মা নদীর তীর থেকে ব্যাপকভাবে বালু তোলা হচ্ছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। যেভাবে বালু তোলা হচ্ছে, তাতে বর্ষা মৌসুমে নদীগর্ভে চলে যেতে পারে অনেক কৃষিজমি ও বসতবাড়ি।

খননযন্ত্র দিয়ে যেভাবে বালু তোলা হচ্ছে, তাতে বর্ষা মৌসুমে নদীগর্ভে চলে যেতে পারে অনেক কৃষিজমি ও বসতবাড়ি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় আরুয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোনায়েম মুনতাকিম রহমান ওরফে অনিক, স্থানীয় ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য এখলাছ উদ্দিন ও স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী সুজন হোসেনসহ আরও কয়েকজন বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত। এর নেপথ্যে রয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যানের চাচাতো ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ফাহিম খান ওরফে রনি।

গত রোববার সরেজমিনে দেখা গেছে, আরুয়া ইউনিয়নের বাউলিকান্দা গ্রামে পদ্মা নদীর তীরে খননযন্ত্র (ড্রেজার) বসানো হয়েছে। পাইপের মাধ্যমে ১০০ থেকে ১৫০ গজ দূরের বিশাল পুকুরে ফেলা হচ্ছে এসব বালু। সেখানে বালু স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। এ জন্য পুকুরপাড়ে বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী প্রাচীর (স্থানীয় ভাষায় চেগার) করা হচ্ছে।

বালু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সুজন হোসেন বলেন, স্থানীয় বাসিন্দা দুই বাবুল চন্দ্র দাস ও কালী চন্দ্র দাসের কাছ থেকে পাঁচ বছরের জন্য দুই লাখ টাকায় পুকুর ও আশপাশের জায়গা ভাড়া নেওয়া হয়েছে। তবে কালী চন্দ্র দাস বলেন, নদীর তীরের জায়গার তেমন মূল্য না হওয়ায় সামান্য টাকায় পুকুর ও জায়গা ভাড়া দেওয়া হয়েছে।

সুজন হোসেন দাবি করেন, অন্যত্র থেকে ট্রলারে করে বালু এনে নদীর তীরে আনা হয়। এরপর এসব বালু পাইপের মাধ্যমে পুকুরে ফেলা হচ্ছে। সেখান থেকে এসব বালু ট্রাকে করে বিক্রি করা হবে। তবে স্থানীয় লোকজন জানান, দিনের বেলায় বালু তোলা বন্ধ রাখা হয়। সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত খননযন্ত্র দিয়ে বালু তোলা হয়।

নদীর তীরে কবির হোসেন ও লুৎফর রহমানের বসতবাড়ি। তাঁরা বলেন, প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে ওই এলাকায় নদীভাঙন হয়। সেখানে খননযন্ত্র দিয়ে যেভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে, তাতে বিশাল গর্তের সৃষ্টি হবে। এতে আগামী বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বাড়লে স্রোতে তাঁদেরসহ আশপাশের বসতবাড়ি নদীগর্ভে চলে যাবে।

নদী থেকে খননযন্ত্র দিয়ে বালু উত্তোলনে নিজের কোনো সম্পৃকতা নেই বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান মোনায়েম মুনতাকিম রহমান। তিনি বলেন, ‘কারা বালু তুলছেন, তা আমার জানা নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’

সাবেক ইউপি সদস্য এখলাছ উদ্দিনও বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘নদীর মাঝে জেগে ওঠা চর ড্রেজিং করা হলে সেখানে ব্যবসা করতে পারি। তবে খননযন্ত্র দিয়ে বালু তোলার সঙ্গে আমি নেই।’

আওয়ামী লীগের নেতা ফাহিম খান বলেন, অন্য স্থান থেকে বলগেটে করে বালু এনে সেখানে ড্রেজারের মাধ্যমে আনলোড করা হচ্ছে। সেখান থেকে বালু কাটা হচ্ছে না।’ তাহলে বালু উত্তোলন কারা করছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আপনাদেরই ফাইন্ড আউট (শনাক্ত) করা দরকার।’

পাশের মালুচী গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দার নদীর তীরে জমি রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মালুচী গ্রামের এক ব্যক্তি বলেন, বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা স্থানীয়ভাবে প্রভাশালী হওয়ায় প্রকাশ্যে তাঁরা বালু উত্তোলনে বাধা দিতে পারছেন না। বালু উত্তোলন বন্ধে তাঁরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।

পরিস্থিতি তুলে ধরা গেলে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবদুল লতিফ বলেন, অন্যত্র থেকে বালু আনার পাশাপাশি নদী থেকেও বালু তোলা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউইএনও) নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ইউএনও জাহিদুর রহমান বলেন, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বাউলিকান্দা এলাকায় খননযন্ত্র দিয়ে বালু উত্তোলন করা হলে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ অন্যত্র থেকে বালু কিনে এনে ব্যবসা করলেও প্রশাসনের কাছ থেকে লিখিত অনুমতি লাগবে। তবে সেখানে তা করা হয়নি।