প্রেমিকের সহায়তায় ব্যবসায়ীকে বৈদ্যুতিক শকে খুন করেন স্ত্রী: পুলিশ

নোয়াখালী জেলার মানচিত্র

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় গতকাল বুধবার সকালে উদ্ধার করা ব্যবসায়ী আবদুল কুদ্দুসকে (৫১) বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক কুদ্দুসের স্ত্রী সুরমা আক্তার (৩৮) পুলিশের কাছে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। হত্যাকাণ্ডে সুরমা ছাড়াও অংশ নিয়েছেন তাঁর প্রেমিক মো. ইসমাইল (৩১)।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেল নাগাদ সুরমা আক্তার ও তাঁর বন্ধুকে আদালতে হাজির করা হবে। আদালতে তাঁরা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে পারেন। আজ দুপুরে প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে ঘটনার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট পুলিশের একজন কর্মকর্তা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

স্থানীয় লোকজনের তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল সকালের দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের রফিকপুর গ্রামের চকোইয়াদের বাড়ির বসতঘর থেকে ব্যবসায়ী কুদ্দুসের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধারের সময় লাশের পায়ে বৈদ্যুতিক তাঁর প্যাঁচানো ছিল। নিহত কুদ্দুস ঢাকার কেরানীগঞ্জে পোশাক কারখানায় তৈরি করা জামায় ব্লক তৈরির কাজ করতেন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে তিনি স্ত্রীসহ ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে আসেন।

পুলিশের ওই কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল ভোরে ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধারের সময় তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তখন নিহত ব্যক্তির স্ত্রীর দেওয়া তথ্য তাঁদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। তিনি অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছিলেন। তখন লাশ উদ্ধার করে থানার আনার সময় ঘটনাটি আসলে কী, তা জানার জন্য তাঁকেও থানায় নিয়ে আসা হয়।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, থানার আনার পর ওই নারীকে দিনভর দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গতকাল রাতে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ওই নারী হত্যার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, তাঁর স্বামীকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। তাঁর ছেলে বন্ধুসহ তিনি ওই কাজ করেছেন। পরে নারীর ছেলে বন্ধুকেও আটক করা হয়। তাঁরা দুজনই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, দুজনের প্রাথমিক স্বীকারোক্তির মধ্য দিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন করা সম্ভব হয়েছে।

এ বিষয়ে রসুলপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ইমাম হোসেন বলেন, আবদুল কুদ্দুস ও সুরমা আক্তার দম্পতির তিন ছেলে এক মেয়ে রয়েছে। আর পুলিশের হাতে আটক  মো. ইসমাইল ওমান প্রবাসী। তিনি কয়েক দিন আগে দেশে আসেন।

বেগমগঞ্জ থানার বিদায়ী ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর জাহেদুল হক আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ঘরের মধ্যে লাশ পড়ে থাকার খবর পেয়ে তিনি মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে ঘটনাস্থলে গেছেন। নারীর কথাবার্তায় অনেক অসংগতি লক্ষ করেন। ওই নারী একবার পুলিশকে বলেন, রাত দুইটার দিকে অজ্ঞাতনামা চার ব্যক্তি ঘরে ঢুকে পড়েন। তাঁকে এক কক্ষে আটকে রাখেন। তারপর আবার বলেন, ওই ব্যক্তিরা তাঁকে বেঁধে রেখেছিল। তাঁরা চলে যাওয়ার পর তিনি পায়ে বৈদ্যুতিক তার প্যাঁচানো অবস্থায় স্বামীকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন।