খুনের পর রেস্তোরাঁয় বিরিয়ানি খেয়ে টাকা ভাগাভাগি করেন তাঁরা
হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে পরিকল্পনাকারী ও খুনিরা একটি রেস্তোরাঁয় একসঙ্গে দেখা করেন। সবাই মিলে বিরিয়ানিও খান। এরপর খুনে অংশ নেওয়া দুজনের হাতে তুলে দেন টাকা। ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিত এই খুনের ঘটনা ঘটে গত বছরের ১১ অক্টোবর। খুন হওয়া ব্যক্তির নাম হাসান তারেক। মাদক ব্যবসায়ীদের পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেওয়ার অপরাধে খুন করা হয় তাঁকে।
গতকাল সোমবার রাতে চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার দামপাড়া এলাকা থেকে ১২ বোতল ফেনসিডিলসহ মাদক ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন গ্রেপ্তার হওয়ার পর হাসান তারেক হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করে পুলিশ।
পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাসান তারেক নিজেও মাদক মামলার আসামি ছিলেন। আলাউদ্দিনসহ চট্টগ্রামের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। গত বছর আলাউদ্দিন ও আরও দুই মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার হন। তাঁদের সন্দেহ, হাসানই তাঁদের মাদকসহ পুলিশকে ধরিয়ে দেন। জামিনে মুক্তি পেয়ে এই ক্ষোভ থেকেই হাসানকে খুনের পরিকল্পনা করেন তাঁরা। এ জন্য ২০ হাজার টাকায় ভাড়া করা হয় খুনি। পরিকল্পনামতো গত বছরের ১১ অক্টোবর হাসানকে খুন করে হাত-পা বেঁধে নির্জন স্থানে ফেলে দেওয়া হয়। ওই দিন রাতেই নগরের খেজুরতলী রাশমণি ঘাটসংলগ্ন এলাকায় লিংক রোডের পাশ থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় হাসানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রথমে লাশের পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। পরে পরিচয় মেলে। মামলা হয় পাহাড়তলী থানায়। পরে মামলাটি তদন্তের জন্য গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে আসে।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (পশ্চিম) মোহাম্মদ মাহবুব আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, শুরুতে লাশের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। পরে একটি মুঠোফোন নম্বরের সূত্র ধরে তাঁর বোনকে পাওয়া যায়। সেখান থেকে তথ্য পাওয়ার পর নিহত হাসানের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া শুরু করে পুলিশ। একপর্যায়ে পুলিশ জানতে পারে, খুনের পর খুনিরা ওয়াসা এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে বিরিয়ানি খেয়েছিলেন। সেই রেস্টুরেন্ট সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে আসামিদের শনাক্ত করা হয়। পরে অভিযান চালিয়ে মূল আসামি আলাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তিনি পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন কীভাবে, কেন হাসানকে খুন করেছেন।
যেভাবে খুন
পুলিশ কর্মকর্তা মাহবুব আলম খান বলেন, ২০২৪ সালের ১০ জানুয়ারি ফেনসিডিলসহ আলাউদ্দিন ও মোরশেদ আলম গ্রেপ্তার হন। আলাউদ্দিন ও মোরশেদ ছাড়াও জব্দ হওয়া মাদকের মালিক ছিলেন শওকত আকবর নামের আরও এক মাদক ব্যবসায়ী। ৯ মাস কারাভোগের পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে তাঁরা জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পান। এরপর নগরের জামাল খান এলাকার একটি গলিতে বসে হাসানকে খুনের পরিকল্পনা করেন তাঁরা। পরিকল্পনামতো গত বছরের ১১ অক্টোবর রাত সাড়ে ১০টার দিকে নগরের কাজীর দেউড়ির এলাকায় আসেন ভাড়াটে খুনি মো. সাকিব ও ইকবাল হোসেন। ইকবাল হাটহাজারী থেকে একটি অটোরিকশা নিয়ে আসেন। শওকত এসে সেখানে পরিকল্পনা অনুযায়ী টাকাও দেন আলাউদ্দিনকে। এরপর খুনিরা নগরের গরীব উল্লাহ শাহ মাজার এলাকা থেকে হাসানকে অটোরিকশায় তুলে বায়েজিদ বোস্তামী-সীতাকুণ্ড লিংক রোডের জঙ্গল সলিমপুরের নির্জন পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে যান। সেখানে সাকিব ও মোরশেদ প্রথমে নাইলনের রশি দিয়ে হাসানের হাত বেঁধে ফেলেন। পরে নাইলের রশি হাসানের গলায় পেঁচিয়ে দুই পাশ থেকে দুজন টান দিলে ২০ মিনিটের মধ্যে হাসান মারা যান। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর লাশটি নিয়ে আবার সিটি গেট থেকে ঘুরে পাহাড়তলী রাসমণি ঘাটসংলগ্ন লিংক রোডে ফেলে দেয়।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মোহাম্মদ মাহবুব আলম খান বলেন, লাশ ফেলে দিয়ে আসার পর আসামিরা ওয়াসা মোড়ে এসে একটি রেস্টুরেন্টে বিরিয়ানি খান। এরপর আলাউদ্দিন শওকতের কাছ থেকে নেওয়া ২০ হাজার টাকার মধ্যে ৫ হাজার টাকা মোরশেদকে, সাকিবকে ২ হাজার টাকা, ইকবালকে ২ হাজার এবং সিএনজিচালককে ২ হাজার টাকা দেন। পরে যে যার মতো বাসায় চলে যান।
মোহাম্মদ মাহবুব আলম আরও বলেন, ঘটনায় জড়িত বাকিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।