‘বৈসাবি’ ঘিরে বেড়েছে কোমর তাঁতের ব্যস্ততা

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার চম্পাঘাট এলাকায় কোমর তাঁতে রিনাই বুনছেন এক নারী। গত বুধবারছবি-প্রথম আলো

পাহাড়ের পাড়ায় পাড়ায় ছন্দময় কোমর তাঁতের শব্দ। তৈরি করা হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী পোশাক। কেউ নিজের কিংবা পরিবারের সদস্যদের জন্য, কেউ আবার বিক্রির উদ্দেশ্যে কোমর তাঁতের পোশাক তৈরি করছেন। পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর বর্ষবরণ ও বিদায়ের অনুষ্ঠান ঘিরেই পোশাক তৈরির এই ব্যস্ততা।

পাহাড়ের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী পৃথকভাবে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, চাংক্রান নামে বর্ষবরণ ও বিদায়ের উৎসব পালন করে। সমতলের লোকজনের কাছে এ উৎসব ‘বৈসাবি’ নামে পরিচিত। ত্রিপুরাদের বৈসু, মারমাদের সাংগ্রাই ও চাকমাদের বিজু উৎসবের নামের আদ্যক্ষর দিয়ে বলা হয় ‘বৈসাবি’।

পাহাড়ের এই উৎসব ঘিরে কোমর তাঁতে পোশাক বোনার রীতি চলছে যুগ যুগ ধরে। পাহাড়ি নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক কোমর তাঁতে বোনা হয়, যা চাকমাদের কাছে পিনন-হাদি আর ত্রিপুরাদের কাছে রিনাই-রিসা নামে পরিচিত। পাহাড়ের সব জনগোষ্ঠীর নারীরা এ পোশাক পরেন। সারা বছর অন্য ধরনের পোশাক পরলেও বর্ষবরণ ও বিদায়ের অনুষ্ঠান উপলক্ষে পাহাড়ি নারীদের পছন্দের তালিকার প্রথমে থাকে এই পোশাক।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার চম্পাঘাট এলাকায় এক তাঁতে দুটি রিনাই বুনছিলেন কনিকা ত্রিপুরা (৪২)। তিনি বলেন, তাঁর ও প্রতিবেশী এক ভাগনির জন্য পোশাক তৈরি করা হচ্ছে। নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী নকশা দিয়ে দুই সপ্তাহ ধরে তিনি এক তাঁতে দুটি রিনাই বুনছেন। উৎসবের আগেই দ্রুত কাজ শেষ করতে হবে। তাই রাত–দিন কাজ করছেন।

বিক্রির উদ্দেশ্যে কোমর তাঁতে কাপড় বুনছিলেন খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী অনুজা চাকমা (১৮)। তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি পিনন- হাদি বুনছেন। এসব পোশাক বিক্রি করে যা লাভ হয়, তাতে নিজের ছোটখাটো খরচ সামলানো যায়। এ ছাড়া কিছু টাকা মাকেও দিতে পারেন।

কোমর তাঁতে পোশাক বুননে ব্যস্ত আরেক নারী। গতকাল বিকেলে সদর উপজেলা গোমরাঘাট এলাকায়
ছবি-প্রথম আলো

পানছড়ির ভাইবোনছড়া এলাকার রেনুকা চাকমাও (২৮) বিভিন্ন জনের কাছ থেকে পিনন-হাদি তৈরির ফরমাশ পেয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা বছর কষ্ট করে কোমর তাঁতে পিনন-হাদি তৈরি করি। বছরের অন্য সময় ন্যায্য দাম তেমন পাই না। তবে এই সময়টাতে প্রচুর চাহিদা থাকে, দামও ভালো পাওয়া যায়। অনেকে আগে থেকে নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী নকশা দিয়ে যান। সেই নকশা অনুযায়ী পোশাক তৈরি করি। কিছু লাভের আশায় রাত-দিন খাটছি।’

তাঁতশিল্পীরা বলেন, একসময় হাতে গোনা কয়েকটি রঙের সুতা দিয়ে পিনন-হাদি তৈরি হতো। তবে বর্তমানে বিভিন্ন রঙের সুতা ব্যবহৃত হচ্ছে। অনেকে নিজেদের মনের মতো নকশা করছেন।