আ.লীগে বিভক্তি, সুযোগ নিতে চান বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা

আরিফুল ইসলাম বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ায় দল তাঁকে বহিষ্কার করেছে। অবশ্য এটি নিয়ে তাঁর মাথাব্যথা নেই।

সুনামগঞ্জ জেলার মানচিত্র

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় এবার চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পাঁচজন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতা চারজন। অন্যজন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা। আওয়ামী লীগের বিভক্তি ও ভোট ভাগাভাগির সুযোগ কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী বৈতরণি পার হওয়ার চেষ্টায় আছেন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নেতা।

তবে সাধারণ ভোটারদের ভাষ্য, আওয়ামী লীগের চারজন নেতা প্রার্থী হলেও আলোচনায় আছেন দুজন। তাই দোয়ারাবাজার উপজেলায় এবার ভোটের লড়াই ত্রিমুখী হবে। তবে গত রোববার রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম হতে পারে—এমন আশঙ্কা সবার।

এই উপজেলায় এবার চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী বীর প্রতীক, বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক দেওয়ান আল তানভীর আশরাফী, উপজেলা বিএনপির নেতা (বহিষ্কৃত), উপজেলার বোগলাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য আরিফুল ইসলাম (জুয়েল), উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন ও আওয়ামী লীগের দেওয়ান আশিদ রাজা চৌধুরী।

ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই উপজেলায় আওয়ামী দুই ভাগে বিভক্ত ছিল আগে থেকেই। এবার নির্বাচনে নেতা–কর্মী তিন প্রার্থীকে নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে ভোটে না যাওয়ায় বিএনপির কোনো নড়াচড়া নেই। উপজেলা নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যেও তেমন নেই। কিন্তু প্রার্থীরা প্রচার–প্রচারণার কোনো কমতি রাখেননি। গ্রামগঞ্জে ঘুরে বেরিয়েছেন। পথসভা, জনসভাসহ মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘুরেছেন।

আওয়ামী লীগের নেতারা সাধারণ ভোটারদের পাশাপাশি দলের নেতা–কর্মীদের পক্ষে রাখা চেষ্টা করছেন। আবার স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমানের আশীর্বাদ আছে, এমনটা বোঝানোর চেষ্টা করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। উপজেলায় আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীও প্রার্থীদের নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

ইদ্রিস আলী দলের প্রবীণ নেতা। দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছেন। উপজেলা পরিষদের একবার চেয়ারম্যান ছিলেন। এলাকায় সব সময় তাঁর গ্রহণযোগ্যতা আছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমানেরও কাছের মানুষ তিনি।

দেওয়ান আল তানভীর আশরাফী ২০২০ সালে এখানে উপনির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তরুণ তানভীর এরপর এলাকায় নিজের একটা অবস্থান গড়ে তুলেছেন। নানাভাবে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গেও এখন তাঁর সুসম্পর্ক রয়েছে। তবে এবার তাঁর আপন চাচাতো ভাই দেওয়ান আশিদ রাজা চৌধুরী প্রার্থী হয়েছেন। ভোটের হিসাবের বাইরেও এটি তানভীরকে কিছুটা বিব্রত করছে বলে মনে করেন অনেকে।

আরিফুল ইসলামও বয়সে তরুণ। উপজেলার সীমান্তবর্তী বোগলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও এবার চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ায় দল বহিষ্কার করেছে। অবশ্য এটি নিয়ে তাঁর কোনো মাথাব্যথা নেই। দলীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই তিনি মাঠে কাজ করছেন। তলে–তলে আওয়ামী লীগের নেতাদেরও সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন।

উপজেলা সদরের বাসিন্দা সমাজকর্মী জামাল উদ্দিন বলেন, ‘ভোট মানুষ বুঝেশুনেই দেবে। যিনি কাজ করতে পারবেন, যাঁকে বিপদে–আপদে পাশে পাওয়া যাবে তাঁকেই আমরা ভোট দেব।’ দোয়ারাবাজার উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সামছুল হক বলেন, ‘বিএনপি এই ভোটে নেই। এটা তো আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যে ভোট। সাধারণ মানুষের এতে কোনো আগ্রহ নেই।’

উপজেলার নৈনগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আশিকুর রহমান বলেন, রোববার রাত থেকে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল সোমবার প্রার্থীদের প্রচারণা চালানোর শেষ দিন ছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে অনেকেই শেষ দিনে ভালোভাবে প্রচারণা চালাতে পারেননি। যদি ভোটের দিনও বৃষ্টি থাকে, তাহলে ভোটার উপস্থিতি আশানুরূপ হবে না।

দোয়ারাবাজার উপজেলায় ২৯ মে ভোট গ্রহণ হবে। এই উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ভোটার ১ লাখ ৩০ হাজার ৭৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৬৪ হাজার ১৩৪ জন ও নারী ভোটার ৬৫ হাজার ৯৪২ জন।