মহাকবি মধুসূদনের শহরে কৃতী সংবর্ধনা, নেচে-গেয়ে দিন পার
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মস্থান যশোরে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। শনিবার সকালে জিলা স্কুল মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেড় হাজার শিক্ষার্থীর মিলনমেলা বসে। কৃতী শিক্ষার্থীরা নেচে-গেয়ে দিনটি উপভোগ করে।
কৃষ্ণকুমারী, শর্মিষ্ঠা, সনেট ও অমিত্রাক্ষর—মহাকবি মাইকেল মধুসূদনের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ চারটি অনুষঙ্গ। সেটার ওপর ভিত্তি করে রাখা হয়েছিল চারটি বুথের নাম। এসব বুথ থেকে কৃতী শিক্ষার্থীরা সকালে তাঁদের উপহারসামগ্রী, সনদ ও ক্রেস্ট সংগ্রহ করে।
বাংলা কবিতা ও কাব্যে সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তন করেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। এ ছাড়া বাংলা নাটক সমৃদ্ধ করতে রচনা করেছেন ‘কৃষ্ণকুমারী’ ও ‘শর্মিষ্ঠা’। কৃতী শিক্ষার্থীদের বিষয়টি মনে করিয়ে দিতেই বুথের এমন নামকরণ। এতে অনুষ্ঠানস্থলে মহাকবির কৃতিত্বের কথা বারবার উচ্চারিত হয়েছে।
সকাল ১০টায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। কালেক্টরেট স্কুলের শিক্ষার্থীরা জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে। এরপর নাচ, গান ও কথামালার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান এগিয়ে চলে। অনুষ্ঠানের শুরুতে মঞ্চে তাৎক্ষণিক কুইজে চারটি বুথ ও অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত মহাকাব্যের নাম জানতে চাওয়া হয়। তিনজন বিজয়ীর হাতে পুরস্কার হিসেবে কিশোর আলো ও বিজ্ঞানচিন্তা তুলে দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইকরামুল কবীর, সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক আহসান হাবীব পারভেজ, প্রথম আলোর প্রশাসন বিভাগের প্রধান উৎপল চক্রবর্তী ও ডেপুটি হেড অব রিপোর্টিং ইমাম হোসেন সাঈদ। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর জেলা প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম।
প্রথম আলো বন্ধুসভা যশোরের সাধারণ সম্পাদক সৌমেন্দ্র গোস্বামী, যুগ্ম সম্পাদক কামরুজ্জামান ও সুমাইয়া সুমীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে যশোর জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক সোয়াইব হোসেন, যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহ্জাহান কবীর, প্রথম আলোর জেলা প্রতিনিধি মাসুদ আলম, বন্ধুসভার সভাপতি ও যশোর কলেজের শিক্ষক লাকী রানী কাপুড়িয়া, বন্ধুসভার উপদেষ্টা ও উদ্যোক্তা শাহেদ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশ না, সারা পৃথিবীকে নেতৃত্ব দিতে হবে। প্রযুক্তিতে দক্ষ ও যোগ্য হয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জায়গা করে নিতে হবে। তবেই বিশ্বে নেতৃত্ব দেওয়া হবে।’
সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের সহকারী অধ্যাপক ইকরামুল কবীর বলেন, ‘প্রথম আলো জীবনের সবচেয়ে বড় মেন্টর। প্রতিদিন প্রথম আলো পড়ে শাণিত হই। এই পত্রিকার তত্ত্ব, তথ্য ও ভাষা আমাকে কথা বলতে প্রস্তুত করে। কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনার মতো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে পত্রিকাটি গুণীজন সৃষ্টিতে বড় ভূমিকা রাখছে।’
অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন বন্ধুসভার সৌমেন্দ্র গোস্বামী, যশোর কালেক্টরেট স্কুলের শিক্ষার্থী কৃষ্ণা দেব ভক্ত, বিনীতা কুন্ডু। নৃত্য পরিবেশন করে একই বিভাগের শিক্ষার্থী নামিরা নাওয়ার ও ফাতেমা ধারা। এ ছাড়া কৃতী শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেও অনেকে নেচে-গেয়ে অনুষ্ঠান মাতিয়ে রাখে।
সারা দেশের ৬৪টি জেলায় প্রথম আলোর আয়োজনে ও শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘শিখো’র পৃষ্ঠপোষকতায় চলছে জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা উৎসব। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের এ আয়োজনে সহযোগিতা করছে ফ্রেশ, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।