কীভাবে এতগুলো বাস পুড়ে গেল, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার ধার্মিকপাড়া এলাকায় অগ্নিকাণ্ডে লন্ডন এক্সপ্রেস গ্যারেজে থাকা ১৪টি বাস পুড়ে গেছে। গতকাল সোমবার রাতে তোলা
ছবি: দিনার মাহমুদ

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার ধার্মিকপাড়া এলাকায় অগ্নিকাণ্ডে একটি গ্যারেজে রাখা ১৪টি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যাত্রীবাহী বাস পুড়ে গেছে। গতকাল সোমবার রাতে লন্ডন এক্সপ্রেস লিমিটেডের যাত্রীবাহী বাসের গ্যারেজে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
আগুনে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে কীভাবে গ্যারেজে পার্কিং করে রাখা বাসগুলো আগুনে পুড়ে গেল, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। অগ্নিকাণ্ডের সময় ঘটনাস্থলে গ্যারেজের নিরাপত্তা প্রহরীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

কয়েক প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে যাত্রাবাড়ীর ধার্মিকপাড়া এলাকায় ওই গ্যারেজের পেছনে দক্ষিণ দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তের মধ্যে আগুন পুরো গ্যারেজে ছড়িয়ে পড়ে। একে একে পুড়তে থাকে ওই ১৪টি বাস। খবর পেয়ে ডেমরা ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে গ্যারেজের ১৪টি বাস সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। লন্ডন এক্সপ্রেস লিমিটেডের বাসটি ঢাকা-চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে চলাচল করত।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কোনাবাড়ী থেকে মানিক দিয়া সড়কের পাশে চারদিকে টিনের বেড়া দিয়ে সীমানা দেওয়া গ্যারেজের ভেতরে ‘লন্ডন এক্সপ্রেস লিমিটেডের’ শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ১৪টি যাত্রীবাহী বাস পার্ক করে রাখা হয়েছিল। আগুনে পেছনের সারির ছয়টি ও মাঝখানের সারির পাঁচটি বাস সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। এই দুই সারির সামনে ফটকের সামনে তিনটি গাড়ি পুড়ে গেলেও ১১টির চেয়ে একটু কম পুড়েছে। গ্যারেজের ভেতরে গাড়ির তিনটি ইঞ্জিন ও বিভিন্ন যন্ত্রাংশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। টিনের বেড়ার পাশ দিয়ে বৈদ্যুতিক তার পড়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে গ্যারেজের ভেতরের নিরাপত্তার রুমটি অক্ষত ছিল। সেখানে রান্নার কাজে ব্যবহৃত সিলিন্ডার গ্যাসের বোতল, চুলাসহ বিভিন্ন মালামাল অক্ষত ছিল।

ঘটনার সময় গ্যারেজের ২০০ গজ দূরে বাইতুল আকরাম জামে মসজিদে তারাবিহ নামাজ পড়ছিলেন সালাম পোলট্রি নেটওয়ার্কের কর্মচারী ফয়সাল হোসেন। তিনি বলেন, গ্যারেজের নিরাপত্তা প্রহরীসহ তিনি মসজিদে নামাজ পড়ছিলেন। গ্যারেজের দক্ষিণ দিকে পেছনে একটি বাসে আগুনে লাগে। আগুন দেখতে পেয়ে তাঁরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তাঁরা এসে গ্যারেজের ফটক তালাবদ্ধ দেখতে পান। পরে তিনিসহ কয়েকজন টিনের বেড়া ভেঙে ভেতরে ঢুকে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু বাতাসের কারণে আগুন পেছন থেকে একে একে অন্য গাড়িগুলোতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পুড়তে থাকে গ্যারেজে রাখা বাসগুলো। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নেভান। ততক্ষণে গ্যারেজে রাখা ১৪টি বাস পুড়ে যায়।

ফয়সাল হোসেন আরও বলেন, বাসের গ্যারেজের নিরাপত্তা প্রহরী তাঁর সঙ্গে কিছু পথ এলেও তিনি গ্যারেজের দিকে না এসে কোনাপাড়ার দিকে মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে চলে যান। তিনি (নিরাপত্তা প্রহরী) এসে দ্রুত গেট খুলে দিলে আগুন নেভানো সহজ হতো। গত তিন-চার মাস আগে এখানে টিনের বেড়া দিয়ে গ্যারেজটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এখানে লন্ডন এক্সপ্রেসের বাস রাখা হতো এবং বাস মেরামতের কারখানাও ছিল।

আরও পড়ুন

গ্যারেজের পাশে ৫০ গজ দূরে খোকন মিয়ার চায়ের দোকান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, চার মাস আগে এখানে গ্যারেজ করা হয়েছে। গাড়ির চালক, নিরাপত্তা প্রহরী ও মিস্ত্রিরা চার-পাঁচজন প্রায়ই তাঁর দোকানে চা খেতে আসতেন। তাঁরা চা খেয়ে চলে যেতেন। গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে গ্যারেজের ভেতরে থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখে তিনি সামনে গিয়ে দেখেন, সেখানে অনেক লোকজন ভিড় করছেন। আগুন লাগার ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি চলে আসে। কিন্তু এর আগেই আগুনে গাড়িগুলো পুড়ে গেছে।

এদিকে আগুন লাগার ঘটনায় ঘটনাস্থলে ওই গ্যারেজের নিরাপত্তা প্রহরীকে পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থলে র‌্যাব-১০, ডেমরা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। রাত ১২টার দিকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ক্রাইম সিনের একটি দল ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে আসে।

এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওহিদুল হক মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগুনে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে নিরাপত্তা প্রহরীকে পাইনি। তবে মুঠোফোনে তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছিল।’ তিনি জানিয়েছেন, অগ্নিকাণ্ডের সময় তিনি নামাজে ছিলেন। ঘটনাস্থলে আসার কথা বললে পরে তিনি আর আসেননি। ঘটনাস্থলে এসে বাসের উপপরিচালক (ডেপুটি ডাইরেক্টর) হিসেবে পরিচয় দেওয়া নুরুল ইসলাম পুড়ে যাওয়া বাস দেখে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর সঙ্গে কথা বলে আগুন লাগার কারণ জানার চেষ্টা চলছে।

খোলা জায়গায় চারদিকে টিনের উঁচু বেড়া ও চারদিকে পানি কীভাবে গ্যারেজের ভেতরে আগুনের ঘটনা ঘটেছে, সেটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ওয়ারী জোনের ডিসি ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তা প্রহরীকে খুঁজে পাইনি। কীভাবে আগুন লাগল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আগুনে ১৪টি বাস পুড়ে গেছে। ক্ষয়ক্ষতি অনেক। একেকটি বাস দুই থেকে চার কোটি টাকার নিচে নয়। সেখানে ওয়ার্কশপের মতো ইঞ্জিন ওভার হোলিং করা ছিল।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা নাশকতা হতেও পারে, আবার না–ও হতে পারে। তদন্তের পর বোঝা যাবে, কী কারণে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

আগুনের খবর পেয়ে ডেমরাসহ ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ঢাকা জোন-৫ প্রধান এ কে এম শামসুজ্জোহা। তিনি বলেন, আগুনে ১৪টি ভলভো বাস পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। গ্যারেজে কাউকে পাওয়া যায়নি। তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে আগুন নেভানো হয়েছে। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে, তা খুঁজে পাওয়া যায়নি।