কুমিল্লায় বিএনপির নেতৃত্বে কনিষ্ঠরা, জ্যেষ্ঠরা কোণঠাসা, দলে ক্ষোভ 

কুমিল্লা মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি এক বছরের বেশি আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলছে।

বিএনপি

কুমিল্লা মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি এক বছরের বেশি আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলছে। কমিটিতে জ্যেষ্ঠ নেতাদের শীর্ষ পদে না রেখে কনিষ্ঠ নেতাদের রাখা হয়েছে। এতে দলের ভেতরে চাপা ক্ষোভ রয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ৩০ মে সন্ধ্যায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে মো. আমিরুজ্জামানকে আহ্বায়ক ও ইউসুফ মোল্লাকে সদস্যসচিব করে ৪৪ সদস্যবিশিষ্ট কুমিল্লা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেন। একই দিন মো. আক্তারুজ্জামান সরকারকে আহ্বায়ক ও এ এফ এম তারেক মুন্সীকে সদস্যসচিব করে ৪১ সদস্যবিশিষ্ট কুমিল্লা উত্তর জেলা কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এ ছাড়া আমিন উর রশিদকে আহ্বায়ক ও জসিম উদ্দিনকে সদস্যসচিব করে ৪১ সদস্যবিশিষ্ট কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা কমিটি গঠন করা হয়। 

কেন্দ্রীয় নেতারা যেভাবে নির্দেশনা ও কমিটি দিয়েছেন, সেভাবে দল চলছে। দলের সব কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এতে হাজার হাজার লোক অংশ নেন।
মোস্তাক মিয়া, কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক

মহানগর কমিটি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করায় আহ্বায়ক মো. আমিরুজ্জামানকে গত বছরের ৭ জুন (আট দিনের মধ্যে) দলীয় শৃঙ্খলাবহির্ভূত কাজ করার অভিযোগে পদ ও দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয় প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক শওকত আলীকে। ২০২২ সালের ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করায় ওই বছরের ১৩ জুন কুমিল্লা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রাজিউর রহমান, সেলিম খান, শাহ আলম মজুমদার ও মো. বিল্লাল, সদস্য শাখাওয়াত উল্লাহ, কোহিনুর আক্তার, আবদুল্লাহ আল মোমেন, হারুন অর রশিদ ও নাসির উদ্দিনকে কমিটি ও দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরে তিন মাসের মধ্যে ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে মহানগর যুবদলের সভাপতি উদবাতুল বারীকে আহ্বায়ক ও মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লাকে সদস্যসচিব করে ২৫ সদস্যবিশিষ্ট কুমিল্লা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। 

ওই আহ্বায়ক কমিটিতে রয়েছেন ১০ জন যুগ্ম আহ্বায়ক ও ১৩ জন সদস্য। এতে রাজিউর রহমান দ্বিতীয় যুগ্ম আহ্বায়ক। রাজিউর রহমান দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ২০২২ সালের ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করে জয়ী হন। রাজিউর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আবদুর রহমান ওরফে সানির শ্বশুর। ওই কারণে আবারও তাঁকে মহানগর বিএনপির ২ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ বিএনপির নেতা–কর্মীরা। 

তাঁরা বলেছেন, রাজিউর দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচন করেন। তাঁকে মহানগর বিএনপির দুটি কমিটিতেই যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। অতীতে দলীয় কর্মসূচিতে তাঁকে দেখা যায়নি। অথচ অন্যদের দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার, পদ কেড়ে নেওয়া ও অব্যাহতি দেওয়া হয়। নেতা–কর্মীদের দাবি, তিন কমিটিতে দলের ত্যাগী ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের আহ্বায়ক, যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব পদে রাখলে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী হতো। এ ছাড়া কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ককে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক করা হলে ২৭টি ওয়ার্ডে দল সাংগঠনিকভাবে ভালো করত। আমিন উর রশিদ কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক। তিনি ব্যবসায়ী। তাঁরা দক্ষিণ জেলার অধিভুক্ত বেশির ভাগ উপজেলায় সাংগঠনিক কাজে গত এক বছরে যেতে পারেননি।

এদিকে উত্তর জেলার বিএনপির সদস্যসচিব এ এফ এম তারেক মুন্সীর ভাই আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এ এফ এম ফখরুল ইসলাম মুন্সী, তারেকের ভাতিজা কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল। তারেক ব্যবসায়ী। হংকংয়ে যাতায়াত, শারীরিক অসুস্থতা ও নানা কাজে ঢাকায় বেশি থাকেন। আহ্বায়ক আক্তারুজ্জামান সরকার তিতাসের নেতা। সব মিলিয়ে আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্ব নিয়ে দলটিতে ক্ষোভ ও অস্থিরতা রয়েছে।

কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতারা যেভাবে নির্দেশনা ও কমিটি দিয়েছেন, সেভাবে দল চলছে। দলের সব কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এতে হাজার হাজার লোক অংশ নেন।’