‘আমার একটা মা ছিল, আল্লাহ তাকেও নিয়ে গেছে’

মা আর নানিকে হারিয়ে পাগলপ্রায় কফিল উদ্দিন। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর বাহারছড়া ইউনিয়নের ইলশা গ্রামেছবি: প্রথম আলো

কফিল উদ্দিন বারবার বলছিল, ‘মা ডাকছে আমাকে, আমি মায়ের কাছে যাচ্ছি।’ ১৭ বছর বয়সী এই তরুণের ওমানপ্রবাসী বাবা মাহবুবুর রহমান মারা গেছেন ২০১৪ সালে। এর পর থেকে মা মাহমুদা বেগম (৪৬) তাদের চার ভাই-বোনকে আগলে রেখেছিলেন পরম যত্নে। সেই মায়ের মৃত্যু কোনোভাবেই মানতে পারছে না কফিল। চিৎকার করে সে বলছিল, ‘আমার একটা মা ছিল, আল্লাহ তাকেও নিয়ে গেল।’

গত সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ঈদগাঁও বাসস্টেশনের খোদাইবাড়ি এলাকায় বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে মাহমুদা বেগমসহ পাঁচজন নিহত ও সাতজন আহত হয়েছেন। হতাহত সবাই মাইক্রোবাসের যাত্রী। তাঁরা কক্সবাজার বায়তুশ শরফ হাসপাতাল থেকে চোখের চিকিৎসা শেষ করে বাঁশখালীতে ফেরার পথে দুর্ঘটনার শিকার হন।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলা খানখানাবাদ ইউনিয়নের রায়ছটা গ্রামের গোলাম ছোবহানের ছেলে দুলা মিঞা (৬৫), পালোয়ান পাড়া এলাকার মাহমুদা বেগম (৪৫), তাঁর মা সায়েরা খাতুন (৬৫), বাহারছড়ার আবু আহমদ (৬৫) ও বাহারছড়া ইউনিয়নের নুরুল আলমের স্ত্রী খাদিজা বেগম (৫০)।

আজ মঙ্গলবার বেলা একটায় বাঁশখালী উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের ইলশা গ্রামে মাহমুদার বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের শোকের মাতম দেখা যায়। মাটির দেয়ালের ছোট ঘরে অঝোরে কাঁদছিলেন মাহমুদার ছেলে-মেয়েরা।

মাহমুদার বড় মেয়ে ইশরাত জাহান বলেন, ‘ঈদের এক সপ্তাহ পর আমার নানি আমাদের ঘরে আসেন। তখন এলাকার একটি চক্ষুশিবিরে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শে কক্সবাজার গিয়ে চোখের অপারেশন করানোর সিদ্ধান্ত হয় নানির। তাই আমার মা আমার নানিকে নিয়ে কক্সবাজারে চোখের অপারেশন করাতে যান। কিন্তু চিকিৎসা শেষ করে আসার সময় দুজনেই মারা গেলেন। এখন আমার দুই বোন ও এক ভাইকে নিয়ে কীভাবে বাঁচব, জানি না।’

নিহত মাহমুদার ভাই নুরুল আলম বলেন, ‘স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে আমার বোন আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন থেকে আমার মা বোনের বাড়িতে আসা-যাওয়া করে তাদের সহায়তা করত। কিন্তু কী থেকে কী হয়ে গেল। এক ঘটনায় মা ও বোনকে হারিয়ে ফেললাম।’

কক্সবাজারের বাঁশখালী সমিতির সদস্য মঈনুদ্দিন রানা বলেন, ‘ঘটনার পর আমরা হতাহতদের উদ্ধার ও চিকিৎসাকাজে এগিয়ে আসি। এ ঘটনায় পাঁচজন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছেন।’