বগুড়ায় আওয়ামী লীগ–সমর্থিত আইনজীবীদের হট্টগোল, ধাক্কাধাক্কি
বগুড়া জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থিতা নিয়ে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আইনজীবীদের হট্টগোল ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার পর বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের দুটি পক্ষ মুখোমুখি। আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে জেলা জজ আদালতের ফটকে এ ঘটনা ঘটে।
আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামী ২৫ নভেম্বর বগুড়া জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে ভোটার ৭৭১ জন। নির্বাচনে বিগত দিনে আইনজীবীরা মহাজোট ও সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ-সমর্থিত প্যানেল এবং বিএনপি ও জামায়াত-সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তবে ২০২০ সালের নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে নিজেদের প্রার্থীর ভরাডুবিকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আইনজীবীদের ঐক্যে ফাটল ধরে। বিভক্ত হয়ে পড়েন আওয়ামী-সমর্থিত আইনজীবীরা।
একপক্ষে নেতৃত্বে আছেন জেলা আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপতি, জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আবদুল মতিন এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর পিপি, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য নরেশ মুখার্জি। অন্য পক্ষে নেতৃত্বে আছেন বগুড়া জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাবেক পিপি রেজাউল করিম।
আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আইনজীবীরা জানিয়েছেন, সমিতির এবারের নির্বাচনে প্রার্থিতা দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ২৩ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সভা ডাকেন আবদুল মতিন-নরেশ মুখার্জি পক্ষের আইনজীবীরা। সেখানে রেজাউল করিম পক্ষের আইনজীবীদের ডাকা হয়নি। সভায় বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ-সমর্থিত প্যানেল থেকে আবদুল মতিনকে সভাপতি ও এ এইচ এম গোলাম রব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ঘোষণা করা হয়।
আজ বেলা ১১টার দিকে রেজাউল করিম ও ওয়াজেদুর রহমান পক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গে আবদুল মতিন-গোলাম রব্বানী পক্ষের আইনজীবীদের বাগ্বিতণ্ডা ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে রেজাউল করিম পক্ষের আইনজীবীরা গতকাল রোববার রেজাউল করিমকে সভাপতি ও ওয়াজেদুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ঘোষণা দেন। আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আইনজীবীদের পাল্টাপাল্টি প্যানেল ঘোষণা নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা যায়, আজ বেলা ১১টার দিকে রেজাউল করিম-ওয়াজেদুর রহমান প্যানেলের আইনজীবীরা জেলা জজ আদালতের প্রধান ফটকের সামনে নির্বাচনী প্রচারণার জন্য একটি তোরণ নির্মাণ করতে গেলে বাধা দেন মতিন-গোলাম রব্বানী প্যানেলের আইনজীবীরা। এ সময় সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ওয়াজেদুর রহমানসহ তাঁর প্যানেলের আইনজীবীদের সঙ্গে অতিরিক্ত পিপি আশেকুর রহমান সুজনসহ অপর প্যানেলের আইনজীবীদের বাগ্বিতণ্ডা ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। পরে অন্য আইনজীবীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনার পর আদালতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
রেজাউল করিম অভিযোগ করেন, ‘বিগত দিনে সমিতির নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবীদের সভা ডেকে সবার মতামতের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধভাবে প্যানেল ঘোষণা দেওয়া হতো। সভা ডাকা হতো আমার এবং আবদুর মতিনের যৌথ স্বাক্ষরে। কিন্তু এবার হঠাৎ করে তাঁরা সভা ডেকে নিজেদের মতো প্যানেল ঘোষণা দিয়েছেন। আমাদের ডাকাও হয়নি। বাধ্য হয়ে আমরাও প্যানেল ঘোষণা দিয়েছি।’
রেজাউল করিম আরও বলেন, প্যানেল ঘোষণার পর আজ আদালত ভবনের ফটকের বাইরে ওয়াজেদুর রহমানের নেতৃত্বে তোরণ নির্মাণ করতে গেলে মতিন-গোলাম রব্বানী প্যানেলের আইনজীবীরা বাধা দেন। এ সময় বাগ্বিতণ্ডা ও হট্টগোল হয়েছে।
অপরপক্ষের আশেকুর রহমান বলেন, ‘বিগত নির্বাচনে ফটকে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ-সমর্থিত প্যানেল থেকে তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। প্যানেল ঘোষণার আগে সভার নোটিশ দিতে গেলেও রেজাউল করিম তা নেননি। উল্টো বিএনপিপন্থীদের সঙ্গে আঁতাত করে আলাদা প্যানেল ঘোষণা করে তোরণ নির্মাণ করতে গেছেন তাঁরা। বিএনপির আইনজীবীরা তোরণ নির্মাণ করতে গেলে আমরা বাধা দিয়েছি।’
নরেশ মুখার্জি বলেন, বগুড়া আদালতে একসময় আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সক্রিয় ছিল। আবদুল মতিন ছিলেন সভাপতি। যেহেতু বর্তমানে এখানে কমিটি নেই, সেই কারণে আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সর্বশেষ কমিটির সভাপতি আবদুল মতিনই জ্যেষ্ঠ। এ কারণে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আইনজীবীরা তাঁকেই সভাপতি প্রার্থী করার পক্ষে। কিন্তু রেজাউল করিম তা মেনে নিতে পারছেন না।