৯ মাস পরও কাজ শেষ হয়নি

এ সড়ক দিয়ে ঢাকায় যাতায়াত করে কিশোরগঞ্জের সদর, হোসেনপুর, পাকুন্দিয়া এবং ময়মনসিংহের নান্দাইল ও গফরগাঁওয়ের লোকজন। 

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর-পাকুন্দিয়া সড়কের নির্মাণাধীন কাওনা সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় লক্ষাধিক মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। সম্প্রতি কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর কাওনা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর-পাকুন্দিয়া সড়কে নির্মাণাধীন নরসুন্দা নদীর ওপর কাওনা সেতুর কাজ নির্ধারিত সময়ের ৯ মাস পরও শেষ হয়নি। এ অবস্থায় লক্ষাধিক মানুষ ঢাকায় যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য নির্মাণাধীন সেতুর পাশে মাটির একটি সরু রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। সে সড়কে ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এ পরিস্থিতিতে দ্রুত সেতুর কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, হোসেনপুর-পাকুন্দিয়া আঞ্চলিক সড়কের নরসুন্দা নদীর ওপর
নির্মাণাধীন কাওনা সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল গত বছরের ৩০ মে। কিন্তু সেতুর একটি গার্ডার নির্মাণ ও ছাদ ঢালাইয়ের কাজ দেড়
বছরের বেশি সময় ধরে ফেলে রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে ঢাকায় যাতায়াতে কিশোরগঞ্জের সদর, হোসেনপুর, পাকুন্দিয়া এবং ময়মনসিংহের নান্দাইল ও গফরগাঁওয়ের যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুর অর্ধেক কাজও এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি। নদীতে এখন পানি নেই। সেখানে কৃষকেরা ফসলের আবাদ করেছেন। সেতুর পাশের নিচু জমি দিয়ে বিকল্প মাটির রাস্তা করা হয়েছে। নদীতে পানি বাড়লেই এ রাস্তা তলিয়ে যাবে।

এ সড়ক দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন কলেজশিক্ষক মো. জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ঠিকাদার সঠিক সময় কাজ শেষ না করায় প্রায় দুই বছর ধরে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে সেতু নির্মাণের সময় বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করে সেতুর কাজ শুরুর কথা ছিল। তা না করে মাটি দিয়ে নদীর গতিপথ বন্ধ করে দায়সারাভাবে একটি সরু কাঁচা রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে।

সরেজমিনে আরও দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরে সেতুর কাজ চললেও সেতুর দুই পাড়ে কোথাও সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড নেই। ধুলায় আচ্ছন্ন চারপাশ। মাটির রাস্তা দিয়ে রিকশা, ইজিবাইক, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, ট্রাক ও বাস চলাচল করছে। এ সময় স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, কাঁচা রাস্তায় গাড়ি চলাচল করায় আশপাশ ধুলায় ছেয়ে যায়। উঁচু-নিচু রাস্তা আর ধুলাবালুতে চরম দুর্ভোগ হচ্ছে তাঁদের।

রাস্তায় চলাচল করা এক ইজিবাইকচালক বলেন, অন্য পাশ থেকে বড় গাড়ি এলে তাঁদের বসে থাকা লাগে। কারণ, এই মাটির রাস্তা সরু। অন্যদিকে গাড়ি চালালে ধুলায় চারপাশ ভরে যায়।

হোসেনপুর থেকে ঢাকাগামী জলসিঁড়ি পরিবহন বাসের চালক খোকন মিয়া বলেন, এবড়োখেবড়ো রাস্তা দিয়ে অনেক সময় গাড়ি উল্টে যাওয়ার উপক্রম হয়। তবু আশপাশে বিকল্প সড়ক না থাকায় এখান দিয়েই যেতে হয়। এ পথ এড়াতে গেলে অন্তত ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে যেতে হয়। এতে সময় ও জ্বালানি খরচ অনেক বেড়ে যায়।

স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, প্রায়ই এ সড়কে দুর্ঘটনা ঘটে। গত দেড়–দুই মাস আগে এখান দিয়ে যাওয়ার সময় একটি ইজিবাইক উল্টে এক নারী নিহত হন, তিন–চারজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া কুয়াশায় মালবাহী একটি ট্রাক উল্টে গিয়েও হতাহতের ঘটনা ঘটে।

এলজিইডির হোসেনপুর উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে এলজিইডির অর্থায়নে ৪০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ২০২১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এইচটিবিএলের সঙ্গে এই চুক্তি হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী প্রায় তিন কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু কাজ শুরুর কিছুদিন পরই ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আর কাজ করেনি। পরে সেতুটি নির্মাণের জন্য কিশোরগঞ্জের এস আলম গ্রুপ চুক্তিবদ্ধ হয়।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের মালিক এস আলম বলেন, নিয়মিত বরাদ্দের টাকা পাওয়া যাচ্ছে না বলে সেতুর কাজ কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেতুর বাকি কাজ শেষ করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।

এলজিইডির হোসেনপুর কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী আবদুল হক জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এস আলমকে দ্রুততম সময়ে কাজ শেষ করার জন্য বারবার চিঠি দেওয়া হচ্ছে। এতে কোনো কাজ হচ্ছে না। এ ছাড়া বরাদ্দের অর্থ নিয়ে কিছুটা ঝামেলা আছে। তাই বরাদ্দের স্বল্পতার জন্য সেতুর নির্মাণকাজ কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে। তাঁরা আবার এ বিষয়ে কথা বলবেন।