নৌকা নেই, তবু অস্বস্তিতে লাঙ্গলের প্রার্থী

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া জাতীয় পার্টির (জাপা) ২৬টি আসনের মধ্যে মানিকগঞ্জ-১ আসন একটি। এই আসনে লাঙ্গলের প্রার্থী মো. জহিরুল আলম ওরফে রুবেল। কিন্তু স্বস্তিতে নেই তিনি। কারণ, ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাউদ্দিন মাহমুদের জোরালো প্রচারণা। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এবং যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক।

মানিকগঞ্জ-১ আসনটি ঘিওর-দৌলতপুর-শিবালয় এলাকা নিয়ে গঠিত। আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম। তবে ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার করে জাপার প্রার্থী জহিরুল আলমকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ।

এরপর ওই নির্বাচনী আসনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা-কর্মী প্রকাশ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা সালাউদ্দিন মাহমুদকে সমর্থন জানিয়ে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেন। এতে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন।

জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা বলছেন, দলের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার হওয়ায় দলের নেতা-কর্মীদের জাপার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার কথা। কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ কেউ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মহীউদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, যেহেতু আসনটি জাপাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কাজেই দলের সবাইকে লাঙ্গলের জন্য কাজ করতে হবে। এ বিষয়ে দলের হাইকমান্ড থেকে নির্দেশনা রয়েছে। দলীয় নেতা-কর্মীর অনেকেই লাঙ্গলের জন্য কাজ করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রচার-প্রচারণার শুরুর দিকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীর অনেকেই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন। এর মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের প্রচ্ছন্ন চাপে দলটির কেউ কেউ লাঙ্গলের প্রার্থীমুখী হন; কিন্তু আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতা–কর্মীই প্রকাশ্যে বা গোপনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়েই কাজ করে যাচ্ছেন।

গত মঙ্গলবার বিকেলে শিবালয় উপজেলার আরিচা বন্দর এলাকায় পথসভার আয়োজন করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাউদ্দিন মাহমুদের কর্মী ও সমর্থকেরা। নির্বাচনী ওই সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নূরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ফয়জুল হক (জ্যোতি), সহসভাপতি সুদীপ ঘোষ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ উদ্দিন, আলী আহসান ও আসলাম মোল্লা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভায় স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাউদ্দিন মাহমুদ প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঈগল প্রতীকে ভোট চান।

গত তিন দিন নির্বাচনী এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, প্রচার-প্রচারণায় জাপার প্রার্থী থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী এগিয়ে রয়েছেন। দুই প্রার্থীরই নির্বাচনী পোস্টার লাগানো হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীর পোস্টার বেশি দেখা গেছে।

এসব বিষয়ে জহিরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, আগের তুলনায় ভোটের মাঠে তাঁর অবস্থা ভালো। যত দিন যাচ্ছে, ভোটাররা তাঁর দিকে ঝুঁকছেন। কারণ, ভোটাররা ভালো প্রার্থী চান। এখন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মোটামুটি সমর্থন পাচ্ছেন। তবে এতে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন তিনি।

স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাউদ্দিন মাহমুদ বলেন, এবার নির্বাচনে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীর অংশ নিতে কোনো বাধা নেই। নির্বাচনে কেন্দ্রে অধিক ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নির্দেশনা রয়েছে। দলের অনেক নেতা-কর্মী তাঁর সঙ্গে রয়েছেন। ভোটারদেরও সরব সমর্থন পাচ্ছেন।