‘ফাতেমা রানীর তীর্থোৎসবে’ আলোয় ভাসল গারো পাহাড়
হাতে মোমবাতি, ঠোঁটে প্রার্থনার সুর—এভাবেই দুই কিলোমিটারেরও বেশি আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ পাড়ি দিলেন হাজারো ভক্ত। গন্তব্য ছিল মা মারিয়ার আশীর্বাদপ্রাপ্ত স্থান শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ‘বারোমারি সাধু লিওর খ্রিষ্টধর্মপল্লি’। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এখানে শুরু হয়েছে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের ‘ফাতেমা রানীর তীর্থোৎসব’।
দুই দিনব্যাপী এই তীর্থোৎসব আজ শুক্রবার শেষ হচ্ছে। শুধু ক্যাথলিক খ্রিষ্টানই নন, অন্য ধর্মাবলম্বীরাও প্রতিবছর অংশ নেন এই উৎসবে। আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবারে এই তীর্থযাত্রার আয়োজন করা হয়।
গতকাল বিকেল চারটায় পবিত্র খ্রিষ্টযোগের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তীর্থোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। এরপর রাত সাড়ে আটটার দিকে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য আলোক শোভাযাত্রা। রাত ১১টায় মা মারিয়ার মূর্তিকে সামনে রেখে বিশাল প্যান্ডেলে অনুষ্ঠিত হয় আরাধনা, আর রাত ১২টায় নিরাময় অনুষ্ঠান ও নিশিজাগরণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রথম দিনের ধর্মীয় কার্যক্রম।
আজ শুক্রবার সকাল আটটায় জীবন্ত ক্রুশের পথ অতিক্রম এবং সকাল ১০টায় মহাখ্রিষ্টযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের তীর্থোৎসব। এ বছরের উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রদূত কেভিন এস র্যান্ডেল। এ সময় জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান ও পুলিশ সুপার (এসপি) আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
১৯৪২ সালে ৪২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় বারোমারি সাধু লিওর ধর্মপল্লি। ১৯৯৮ সালে প্রয়াত বিশপ ফ্রান্সিস এ গমেজ স্থানটিকে ‘ফাতেমা রানীর তীর্থস্থান’ হিসেবে ঘোষণা করেন। তখন থেকেই প্রতিবছর আয়োজিত হয়ে আসছে এই ধর্মীয় উৎসব।
এ বছর প্রায় ৩০-৪০ হাজার দেশি-বিদেশি রোমান ক্যাথলিক তীর্থযাত্রী অংশ নিয়েছেন উৎসবে। সার্বিকভাবে উৎসব এলাকা ছিল আলো, প্রার্থনা ও শান্তির আবহে মোড়ানো।
খাগড়াছড়ি থেকে আসা তীর্থযাত্রী জুয়েল ত্রিপুরা বলেন, ‘আমি প্রথমবারের মতো এখানে এসেছি। এসে খুব ভালো লাগছে। এর পর থেকে পরিবারের সবাইকে নিয়ে প্রার্থনায় আসব।’
মুক্তাগাছা থেকে আসা কারিশমা চাম্বুগং বলেন, ‘মারিয়ার কাছে এলে মনে একধরনের শান্তি পাই। আমরা প্রার্থনা করি যেন জীবনের দুঃখ-কষ্ট দূর হয়। প্রতিবছর এই সময়টার অপেক্ষায় থাকি।’
গাজীপুর থেকে পরিবারের সঙ্গে এসেছেন শিক্ষার্থী ঝর্ণা আরেং। তিনি বলেন, সবাই যখন মোমবাতি প্রজ্বালন করে প্রার্থনা করতে করতে পাহাড়ি আকাঁবাঁকা পথ অতিক্রম করছিলেন, তখন পাহাড় আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছিল। তীর্থে আমরা মা মারিয়ার কাছে প্রার্থনা করতে এসেছি।’
সাধু লিওর ধর্মপল্লির পাল পুরোহিত ও তীর্থোৎসব কমিটির আহ্বায়ক তরুণ বনোয়ারি বলেন, ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এ তীর্থে দেশ-বিদেশের হাজারো মানুষ সমবেত হয়েছেন। তাঁরা দুই দিনব্যাপী তীর্থে নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। মা ফাতেমা রানীর কাছে দেশ ও মানবজাতির কল্যাণে প্রার্থনা শেষে যাঁর যাঁর বাড়ি ফিরে যাবেন।