যে মহাসড়কে চলতে চলতে দেখা মেলে আগুনরাঙা পলাশের

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সড়ক বিভাজকে ফুটে থাকা পলাশ ফুল। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মিয়াবাজার এলাকায়ছবি: এম সাদেক

আগুনরাঙা পলাশ ফুল ফুটেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এলাকার সড়ক বিভাজকে। মহাসড়কে গাড়িতে চলতে চলতে ফুলের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হন যাত্রীরা। এই সুন্দর থেকে বঞ্চিত হন না পথচারীরাও।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন হওয়ার পর সড়ক বিভাজকে নানা প্রজাতির ফুলের গাছ লাগানো হয়। সৌন্দর্যবর্ধন ও বিভাজকের মাটি আটকে রাখার জন্য ওই গাছ লাগানো হয়। এর মধ্যে পলাশও আছে। বসন্তে পলাশ ফোটে। এ ছাড়া ঋতুভেদে এখানে ফোটে সোনালু, কৃষ্ণচূড়া।

মহাসড়কের মিয়াবাজার, সুয়াগঞ্জ, সদর দক্ষিণ, চান্দিনা ও দাউদকান্দি এলাকায় পলাশ ফুল চোখে পড়ে। যত দূর চোখ যায়, শুধু রঙিন পলাশ আর পলাশ। কুমিল্লা নগরের জিলা স্কুল এলাকার বাসিন্দা ফুয়াদ আহমেদ বলেন, ‘মহাসড়কে পলাশ ফুল দেখে ভালো লাগে। সারি সারি গাছ আর তাতে ফুটে থাকা আগুনরাঙা পলাশ।’

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ শামসিল আরেফিন ভূঁইয়া বলেন, পলাশ বসন্তের ফুল। পাতাহীন উঁচু উঁচু ডালে ফুটে থাকে পলাশ। এটি তার ফুলের জন্য পরিচিত। শীতে পাতা ঝরে গেলে এর কলি ফোটে। এরপর ফুল হয়। একেকটি গাছ ১৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। এর বাকল ধূসর। শাখা-প্রশাখা ও কাণ্ড আঁকাবাঁকা। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘বুটিয়া মনোস্পার্মা। পলাশ ফুল ফবেসিয়াই পরিবারের সদস্য। কক্সবাজারের পাটুয়ারটেকে সড়কের দুই ধারে এই ফুল দেখা গেছে। সেন্ট মার্টিনেও এই ফুলের গাছ আছে।

পলাশ ভারতীয় উপমহাদেশের ফুল। বাংলাদেশে এই ফুল বেশি ফোটে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম, পুরুলিয়া এলাকায় এই ফুলের দেখা মেলে। বেঙ্গালুরুতেও পলাশ আছে। পলাশ ফুল লাল, লালচে কমলা, হলুদ ও সাদা রঙের হয়ে থাকে। এই গাছের নানা ঔষধি গুণও আছে। বসন্তে গাঁটের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে অনেকে এই ফুল ব্যবহার করেন। পলাশগাছের ছাল, পাতা ও বীজ নানা রোগ সারাতে কাজে লাগে। চর্মরোগ, জ্বর, ডায়রিয়া, ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসায় এর ব্যবহার আছে।

যুগে যুগে কবি-সাহিত্যিক আর শিল্পীদের কথা-গানে-ছবিতে পলাশ ফুল এসেছে বারবার। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখায় পলাশ এসেছে এভাবে—‘হলুদ গাঁদার ফুল, রাঙা পলাশ ফুল/এনে দে এনে দে নইলে/বাঁধব না, বাঁধব না চুল...।’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানে-কবিতায় অসংখ্যবার এসেছে পলাশের কথা।