আমের ফলনে ‘শুভ লক্ষণ’ নিয়ে রাজশাহীতে ঝরল বৃষ্টি
রাজশাহীতে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল রোববার বিকেলে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। রাত ১২টার দিকে দমকা হাওয়াসহ ভারী বৃষ্টি হয়েছে। বিকেলে ২ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। আর রাতে ১৭ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টির কারণে ধুলাবালু মুছে রাজশাহীর প্রাণ-প্রকৃতিতে সজীবতা ফিরেছে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১১ মার্চ দুপুরে ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। রাজশাহীর কিছু জায়গায় সেই বৃষ্টি হয়েছিল। তবে গত ২৪ ঘণ্টার বৃষ্টি রাজশাহীর সব জায়গায় হয়েছে। গত শুক্রবার থেকেই রাজশাহীর আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল। শনিবার রোদ থাকলেও রোববার সারা দিনই মেঘাচ্ছন্ন ছিল। দুপুর থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়। বিকেলের দিকে তা বেড়ে যায়।
রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। মাঝে বিরতি দিয়ে রাত ৯টার দিক থেকে আবার বৃষ্টি শুরু হয়। রাত ১২টার দিকে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টির সঙ্গে ছিল দমকা বাতাস। এ সময় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৬ দশমিক ৪ মিলিমিটার। বৃষ্টির কারণে রাজশাহীর তাপমাত্রা কমে গেছে। গত সপ্তাহে তাপমাত্রা ছিল ৩০ ডিগ্রির ওপরে। এবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রির নিচে নেমে এসেছে। আজ সোমবার সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৭ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল রোববার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, রাজশাহীতে কয়েক দিন ধরে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। এর মধ্যে গতকাল রোববার দুপুরের পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে। আজকেও বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
এদিকে রাজশাহীতে কয়েক বছরের মধ্যে এবার আমবাগানে সবচেয়ে বেশি মুকুল এসেছে। মুকুল থেকে এখন গাছে গাছে গুটি আম ঝুলছে। এবার রাজশাহীতে ১ হাজার ৬৩ হেক্টর জমিতে আমের চাষ বেড়েছে। গতবারের তুলনায় এবার প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন ফলন বাড়তে পারে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার রাজশাহী জেলায় ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমির বাগানে আম চাষ করা হয়েছে। গত বছর এই পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর। গতবার আম উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৬ হাজার ১৫৬ মেট্রিক টন। এবার ২ লাখ ২৫ হাজার ৯১২ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।
গত ২৪ ঘণ্টার বৃষ্টিপাতকে আমের ফলনের জন্য ‘শুভ লক্ষণ’ হিসেবে দেখছেন রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণবিষয়ক কর্মকর্তা মোছা. উম্মে ছালমা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এই বৃষ্টি আমের জন্য খুবই ভালো। এবার গত বছরের তুলনায় মুকুল বেশি এসেছে। শুরুর দিকে বৃষ্টি ছিল না। এই সময়ের বৃষ্টিতে আম ঝরে পড়ার ঝুঁকি কম। তা ছাড়া আমের পাতায় ধুলাবালু লেগে ছিল। এগুলোর কারণে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। বৃষ্টির কারণে সব ধুলা ধুয়ে গেছে। এতে আমের ফলন ভালো হবে। এই বৃষ্টির জন্য কৃষকও অপেক্ষা করছিলেন। মাঠে এখন বোরো ধান। এই ধানের জন্য খুবই ভালো হয়েছে। তা ছাড়া কয়েক দিনের মধ্যেই কৃষক তিল ও পাট ফলাবেন। এই বৃষ্টি তাঁদের স্বস্তি এনে দিয়েছে।