আলোচিত-সমালোচিত ব্যবসায়ী সাইফুল আলম মাসুদ (এস আলম) ও তাঁর ভাই আবদুস সামাদ লাবুর ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও আল–আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে থাকা সব শেয়ার জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। জনতা ব্যাংকের ১ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকার ঋণখেলাপির করা মামলায় আজ রোববার বিকেলে অর্থঋণ আদালত চট্টগ্রামের বিচারক মুজাহিদুর রহমান শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
এর আগে দুপুরে সাইফুল আলম, তাঁর ভাইসহ ২৪ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকার ঋণখেলাপির অভিযোগে মামলা করে ঢাকার প্রধান কার্যালয় ও নগরের আগ্রাবাদ সাধারণ বিমা ভবন শাখা কার্যালয়ের পক্ষে কর্মকর্তা সত্যজিৎ ঘোষ।
অর্থঋণ আদালত চট্টগ্রামের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ঋণখেলাপির মামলায় আদালত এস আলমের ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও তাঁর ভাই আবদুস সামাদ লাবুর আল–আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে থাকা শেয়ার জব্দের আদেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার এই ঋণের এত বড় অনিয়ম কীভাবে হলো, সেটি তদন্ত করার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।’
এস আলম ও আবদুস সামাদ ছাড়া মামলার অন্য বিবাদীরা হলেন তাঁদের আরেক ভাই রাশেদুল আলম, শহীদুল আলম, এস আলমের স্ত্রী ফারাজানা পারভীন, আবদুস সামাদের স্ত্রী শাহানা ফেরদৌসসহ তাঁদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
আদালত সূত্র জানায়, জনতা ব্যাংকের চট্টগ্রামের সাধারণ বিমা ভবন করপোরেট শাখা থেকে এস আলম গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন লিমিটেডের নেওয়া ১ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় অনাদায়ি এ অর্থ আদায়ের জন্য এস আলম গ্রুপের ১ হাজার ৮৬০ শতাংশ জমি গত ২০ নভেম্বর নিলামে তোলে জনতা ব্যাংক। ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে নিলাম ডাকে। এস আলম গ্রুপের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন শিল্প কাঁচামাল, বাণিজ্যিক পণ্য ও নির্মাণসামগ্রীর ব্যবসায় জড়িত ছিল।
২০০৪ সাল থেকে এস আলম গ্রুপ জনতা ব্যাংকের গ্রাহক। ব্যাংকটির চট্টগ্রামের সাধারণ বিমা ভবন করপোরেট শাখার দেওয়া ঋণের ৮০ শতাংশের বেশি নিয়েছে গ্রুপটি। এ শাখায় এস আলম গ্রুপের ঋণের পরিমাণ ১০ হাজার ১০০ কোটি টাকা। ঋণের বিপরীতে ব্যাংকটিতে বন্ধক রয়েছে ২ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকার জমি ও স্থাপনা।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে যান। তাঁর সরকারের আমলে যেসব ব্যবসায়ী গোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছে, তাদের অন্যতম এস আলম গ্রুপ। গত এক দশকে সাইফুল আলম ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে ব্যাংক দখল, অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। এর পেছনে ছিল রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক প্রশ্রয়।