প্রায় ৩৫ বছর আগে দিনমজুর স্বামী মোতালেব হোসেনের মৃত্যুর পর অনেক কষ্টে চার ছেলে-মেয়েকে বড় করছেন রাহেলা বেগম (৭০)। বিয়ের পর ছেলে মেয়েরা আলাদা হয়ে গেলে একা হয়ে পড়েন রাহেলা। থাকেন আশ্রয়ণ প্রকল্পে। গ্রামে গ্রামে ঘুরে মানুষের কাছে সাহায্য তুলে জীবীকা নির্বাহ করেন তিনি। কনকনে শীতে কষ্টের শেষ নাই তাঁর। প্রথম আলো ট্রাস্টের কম্বল পেয়ে খুশি রাহেলা। এক হাতে লাঠিতে ভর করে অন্য হাতে কম্বল নিয়ে বললেন, ‘জার খানোত (শীতের মধ্যে) কম্বলডা পায় খুপে উপকার হইল বাপু। বেলা ডুবিলে ঘরটাত শিল শিল করে বাতাস ঢুকেছে। মুই একেলা মানসি, এ্যালা কনেক গরম বান্ধিবে।’
শুক্রবার দুপুরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের পানিমাছপুকুরী আশ্রয়ণ প্রকল্প ও এর আশপাশের ৬০ জন শীতার্ত মানুষের সঙ্গে প্রথম আলো ট্রাস্টের কম্বল পান রাহেলা বেগম। এদিন প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে পঞ্চগড় জেলার বিভিন্ন এলাকায় মোট ২৪০ দুস্থ শীতার্ত মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করেছেন পঞ্চগড় বন্ধুসভার সদস্যরা।
সকালে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চারদিক ছিল ঘন কুয়াশায় ঢাকা। কয়েক দিন ধরেই উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে বইছিল হিমালয় থেকে আসা হিমেল বাতাস। অনুভূত হচ্ছিল হাড়কাঁপানো শীত। এমন আবহাওয়ার মধ্যে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঘন কুয়াশার মধ্যেই বন্ধুসভার সদস্যরা কম্বল নিয়ে হাজির হয় জেলার আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের পানবারা আশ্রয়ণ প্রকল্পে। সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্প ও আশপাশের ৬০ জন শীতার্ত মানুষের হাতে কম্বল তুলে দেওয়া হয়। এরপর বোদা উপজেলার নতুনহাট-কালিয়াগঞ্জ এলাকায় ৬০ জন দুস্থ শীতার্ত মানুষের হাতে প্রথম আলো ট্রাস্টের কম্বল তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিকেলে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে আরও ৬০টি কম্বল বিতরণ করেন বন্ধুসভার সদস্যরা।
এর আগে বন্ধুসভার সদস্যরা স্থানীয় সচেতন মানুষদের সহায়তায় পঞ্চগড় সদর, আটোয়ারী ও বোদা উপজেলার এসব এলাকায় ঘুরে দুস্থ ও অসহায় মানুষদের খুঁজে খুঁজে তালিকা তৈরি করেন এবং একটি করে টোকেন (স্লিপ) তুলে দেন। কম্বল বিতরণের সময় আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তোজাক্কারুল ইসলাম, বোদা উপজেলার স্কুল শিক্ষক বশিরুল আলম, আইনজীবী মনসুর আলী, স্থানীয় নারী উদ্যোক্তা খাদিজা আক্তার, প্রথম আলোর পঞ্চগড় প্রতিনিধি রাজিউর রহমান, পঞ্চগড় বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান, সহসভাপতি সোহাগ রানা সুমন, পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক রায়হান শরীফ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক ওয়াকিউর রহমানসহ বন্ধুসভার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
কম্বল পেয়ে পানবারা আশ্রয়ণ প্রকল্পে বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পটা সরকার নির্মাণ করে দেওয়ার ২৫ বছর হলো, পুরোটাই টিনের তৈরি। দীর্ঘদিন হওয়ায় বেশির ভাগ টিন ফুটা হয়ে গেছে। শীত আর বৃষ্টির সময় ভেতরে থাকা খুব কষ্টকর। আমাদের কষ্ট কেউ দেখে না। আজ প্রথম আলোর কম্বল পাইছি। আমরা অনেক খুশি।’
শীতার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন। সহায়তা পাঠানো যাবে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে।
হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ ত্রাণ তহবিল, হিসাব নম্বর: ২০৭২০০১১১৯৪ ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।
অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩-০৬৭৫৫৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। এ ছাড়া বিকাশ অ্যাপে ডোনেশন অপশনের মাধ্যমেও আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন।