পাট চাষে খরচ বাড়লেও ভালো লাভ চাষিদের

বাজারে প্রতি মণ পাট ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খরচ সব খরচ বাদে কৃষকের প্রতি মণ পাটে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা লাভ হচ্ছে।

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার তলট গ্রামের ইছামতী সেচ খালে চলছে পাট জাগ দেওয়ার কাজ। দাম ভালো থাকায় পাট জলদি হাটে তোলার চেষ্টা করছেন তাঁরা। গত মঙ্গলবার
ছবি : প্রথম আলো

পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার কৃষকেরা নতুন পাট ঘরে তুলছেন। পাটের আবাদে এবার কৃষকের গত বছরের চেয়ে বেশি খরচ হয়েছে। প্রতি বিঘায় এবার ছয় হাজার টাকা বাড়তি গুনতে হয়েছে কৃষকদের। কিন্তু দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকেরা খুশি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেড়া ও সাঁথিয়ার পাটের হাটগুলোতে এখন প্রতি মণ পাট ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে খরচ সব খরচ বাদে কৃষকের প্রতি মণ পাটে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা লাভ হচ্ছে।

গত মঙ্গলবার সাঁথিয়া উপজেলার করমজা হাটে গিয়ে কথা হয় বেড়া উপজেলার নলভাঙা গ্রামের পাটচাষি ইদ্রিস আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, হাটে ১০ মণ পাট এনে ২ হাজার ৯৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন। এতে প্রতি মণে ৮০০ টাকার মতো লাভ হয়েছে তাঁর। এবার চার বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছিলেন। এতে প্রতি বিঘায় গড়ে আট মণ ফলন পেয়েছেন। ঘরে এখনো ২০ মণের মতো পাট আছে।

দুই উপজেলার ১০ জন কৃষক বলেন, এবার পাটের আবাদ করতে গিয়ে নানাভাবে বিড়ম্বনায় পড়েছেন তাঁরা। মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টির কারণে পাটের চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া পাট কাটার সময় অনাবৃষ্টির কারণে তাঁদের জাগ দিতে সমস্যা হয়েছে। অনেককে তিন থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে নিয়ে পাট জাগ দিতে হয়েছে। এ ছাড়া গত বছরের তুলনায় বীজ, কীটনাশক, সারসহ শ্রমিকের মজুরিও এবার বেড়েছে। ফলে পাট জাগ দেওয়াসহ সব খরচ মিলিয়ে গত বছরের চেয়ে এবার বিঘাপ্রতি প্রায় ছয় হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে। গত বছর প্রতি বিঘা জমিতে পাট উৎপাদনে প্রায় ১২ হাজার টাকা খরচ হলেও এবার ১৮ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে।

সাঁথিয়া উপজেলার তলট গ্রামে ইছামতী সেচখালে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকেরা দল বেঁধে জাগ দেওয়া পাট থেকে আঁশ ছাড়াচ্ছেন। কেউবা আবার পাট ও পাটখড়ি শুকাচ্ছেন। কৃষকেরা বলেন, দুই থেকে তিন কিলোমিটার দূরে তাঁদের পাটের খেত। অন্য বছর পাটখেতের পাশেই তাঁরা পাট জাগ দেন। এবার পানির অভাবে তাঁরা ট্রলিতে করে পাট এখানে এনে জাগ দিয়েছেন।

কামলাদের সঙ্গে নিয়ে পাট ছাড়াচ্ছিলেন সাঁথিয়ার করমজা গ্রামের পাটচাষি মো. আলম। তিনি বলেন, ‘গতবারের চেয়ে বেশি খরচ হয় গেল। ফলনও কিছুটা কম পাইল্যাম। তবে আশা করত্যাছি বাজারে এই পাট কমপক্ষে তিন হাজার টাকা মণ দরে বেচপ্যার পারব। লাভ থাকপি।’

বেড়া বাজারের পাট ব্যবসায়ী শামসুল হক বলেন, গত বছরের মতো এবারও পাটের ভালো দাম পাচ্ছেন চাষিরা। এমন দামে পাটচাষিরা বাজারে পাট বিক্রি করে খুশি মনেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবার বেড়া উপজেলায় ৩ হাজার ৪৫৫ হেক্টর ও সাঁথিয়ায় ৭ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। গত বছরেও পাটের দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকেরা এবার আগের তুলনায় বেশি জমিতে পাটের আবাদ করেছিলেন। তবে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ফলন কিছুটা কম হয়েছে। গত বছর বিঘায় ১০ থেকে ১১ মণ পাট পাওয়া গেলেও এবার গড়ে ৮ মণ ফলন পাওয়া গেছে।

সাঁথিয়া কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার গোস্বামী ও বেড়া উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ইউসুফ আলী জানান, খরা পরিস্থিতির কারণে শুরুতে কৃষকেরা পাট জাগ দিতে সমস্যায় পড়েছেন। তবে গত কয়েক দিন বৃষ্টি হওয়ায় এখন অনেকে জমির কাছে পাট জাগ দিতে পারছেন। এবার পাটের ফলন কিছুটা কম হলেও কৃষকেরা ভালো দাম পাচ্ছেন।