১১টার পর হলে ঢোকা ছাত্রীদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ

ছাত্রদল নেতার আপত্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদে ছাত্রীদের বিক্ষোভ। বুধবার রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলাই–৩৬ হলের সামনেছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলাই ৩৬ হলে রাত ১১টার পর প্রবেশ করা ছাত্রীদের নিয়ে ছাত্রদলের এক নেতা ফেসবুকে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মন্তব্যটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা করছেন শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতারা। ওই নেতার শাস্তির দাবিতে আজ বুধবার রাতে বিক্ষোভ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলাই–৩৬ হলের ছাত্রীরা।

ছাত্রদলের ওই নেতার নাম আনিসুর রহমান মিলন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখদুম হল শাখা ছাত্রদলের সহসভাপতির দায়িত্বে আছেন। তিনি দাবি করেছেন, ওই সময় ফেসবুক আইডি তাঁর ‘নিয়ন্ত্রণে ছিল না’। অভিযোগ ওঠার পর রাতে ওই নেতার পদ স্থগিতের কথা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার রাত ১১টার পরে হলে ফেরায় জুলাই ৩৬ হলের ৯১ ছাত্রীকে প্রাধ্যক্ষের অফিসে তলব করে নোটিশ দেয় হল কর্তৃপক্ষ। ওই বিজ্ঞপ্তির একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা হয়। পরদিন মঙ্গলবার সমালোচনার মুখে অনিবার্য কারণ দেখিয়ে নোটিশটি প্রত্যাহার করে নেয় হল প্রশাসন। ফেসবুকে এ-সংক্রান্ত একটি ফটোকার্ডের মন্তব্যের ঘরে ছাত্রদল নেতা আনিসুর রহমানের আইডি থেকে ছাত্রীদের ‘বিনা পারিশ্রমিক যৌনকর্মী’ বলে মন্তব্য করা হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখদুম হল শাখা ছাত্রদলের সহসভাপতি আনিসুর রহমান
ছবি: সংগৃহীত

আজ বুধবার বিষয়টি সামনে এলে অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী অশেকা জাইমা খান তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক টাইমলাইনে লিখেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারে এমন অহরহ গার্বেজের দেখা মিলবে।...আজকে ছাত্র হলের প্রভোস্ট যদি বলেন ১১টার পর হলের বাইরে থাকলে নোটিশ বোর্ডে নাম আসবে। সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনের পদত্যাগ চেয়ে বসবে।’

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র গণমঞ্চের আহ্বায়ক নাসিম সরকার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ছাত্রদল তো নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে মিছিল করল, খুবই ভালো কাজ। আজ দেখি নিজ দলের নেতার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়, আর রাবি প্রশাসনেরই জোর কেমন, অপেক্ষায় রইলাম...’

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল লিখেছেন, ‘গতকালই নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করল ছাত্রদল। নিজ দলের কর্মীর নারী অবমাননার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয় দেখতে চাই। প্রশাসনের সাইবার বুলিং–বিরোধী সেলের কার্যকারিতাও দেখতে চায় শিক্ষার্থীরা।’

আরও পড়ুন

ছাত্রশিবিরের আহসান উল্লাহ ফারহান নামে এক নেতা লিখেছেন, ‘...এর মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হলো ছাত্রদল নারীদের সম্মান করতে জানে না। নারীদের ধর্ষণ এবং সম্মানহানি করার ক্ষেত্রে ছাত্রদল ছাত্রলীগের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়...।’

এ বিষয়ে ছাত্রদল নেতা আনিসুর রহমানের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি সাড়া দেননি। তবে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক টাইমলাইনে লিখেছেন, ‘আজ দুপুরের দিকে আমার আইডির নিয়ন্ত্রণ আমার কাছে ছিল না। যার ফলে বিভিন্ন গ্রুপে আমাকে ছোট করার জন্য বাজে বাজে সব কমেন্ট করা হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আমি সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।’

অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতার পদ স্থগিত

এ ঘটনার পর রাতে এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল জানিয়েছে, বিষয়টির সত্যতা যাচাই না হওয়া পর্যন্ত সংগঠন আনিসুর রহমানের পদ স্থগিত করেছে। সত্যতা যাচাই ও সঠিক তদন্ত নিশ্চিত করার জন্য ২ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যাতে আছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শাকিলুর রহমান ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পদাক শফিকুল ইসলাম।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর আইডির নিয়ন্ত্রণ তাঁর কাছে ছিল না। সাংগঠনিক দায়িত্বে থেকে এমনটা করার কথা না। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব। যদি ঘটনার সতত্য পাওয়া যায়, তাঁকে আজীবনের জন্য ছাত্রদল থেকে বহিষ্কার করা হবে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে শাস্তি দেওয়ার জন্য ছাত্রদল থেকে সুপারিশ করা হবে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। আগামীকাল প্রক্টরিয়াল বডি থেকে ওই নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে।’

ছাত্রীদের বিক্ষোভ

ছাত্রদল নেতার আপত্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলাই–৩৬ হলের ছাত্রীদের বিক্ষোভ। বুধবার রাতে ক্যাম্পাসে
ছবি: প্রথম আলো

ছাত্রদল নেতার আপত্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলাই-৩৬ হলের ছাত্রীরা। বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে হলের সামনে অবস্থান নিয়ে তাঁরা বিক্ষোভ শুরু করেন। রাত পৌনে ১১টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় ছাত্রীরা ‘ইভটিজারের কালো হাত ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও’, ‘নারীদের বুলিং করে, প্রশাসন কি করে?’, ‘ইভটিজারের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’ প্রভৃতি স্লোগান দিচ্ছেন।

আরও পড়ুন

বিক্ষোভ থেকে ছাত্রীরা তিনটি দাবি উত্থাপন করেন। দাবি তিনটি হলো- ছাত্রদল আনিসুর রহমানের স্থায়ী বহিষ্কার, মনোনয়নপত্র বাতিল ও প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে; সাইবার বুলিং সেল গঠন করতে হবে এবং ফেসবুকে যাবতীয় অশালীন মন্তব্যের জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।