সুদের টাকা দিতে না পেরে আত্মহত্যার ঘটনায় ‘সুদখোরদের’ গ্রেপ্তারের দাবি
সুনামগঞ্জে সুদের টাকা না দিতে পেরে ফয়সল আহমদ সৌরভ (২৫) নামের এক যুবকের আত্মহত্যার ঘটনায় করা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে জেলার তাহিরপুর উপজেলা সদরে সর্বস্তরের তাহিরপুরবাসীর ব্যানারে এই কর্মসূচি পালিত হয়। মানববন্ধন শেষে সদর বাজারে একই দাবিতে বিক্ষোভ করেন তাঁরা।
ফয়সল আহমদের বাড়ি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বালিজুরী ইউনিয়নের পাতারি গ্রামে। তাঁর বাবার নাম আজিজুর রহমান। গত বৃহস্পতিবার রাতে গ্রামের একটি বটগাছে ঝুলন্ত অবস্থায় ফয়সলের লাশ পাওয়া যায়। ফয়সল আহমদের স্ত্রী ও চার মাস বয়সী এক মেয়ে আছে।
আত্মহত্যার আগে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট দেন ফয়সল। তাতে তিনি লেখেন, ‘আমি গলায় দড়ি দিলাম তুই রফিকের লাগি। আমাকে কাবু করে লাশ বানাইলি তুই। ভালো থাক বেইমান। সফিকের কাছ থেকে এক লাখ টাকা সুদে আনছিলাম, তিন লাখ টাকা দেওয়ার পরও এখনো সাড়ে তিন লাখ টাকা পায়। এই রফিক আর সফিকের লাগি আত্মহত্যা করলাম।’
ফয়সলের ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করা শফিক মিয়ার (৩৮) বাড়ি একই ইউনিয়নের আনোয়ারপুরে। রফিক মিয়ার (৪৫) বাড়ি উপজেলার নুরপুর গ্রামে। ঘটনার পর ফয়সলের বাবা বাদী হয়ে শফিক ও রফিকের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও তিন–চারজনকে আসামি করা হয়। ঘটনার পর থেকে শফিক ও রফিক পলাতক।
আজ তাহিরপুর সদর বাজারে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য দেন উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আলী আহমদ, স্থানীয় বাসিন্দা রুহুল আমিন, হোসাইন শরীফ, ইউপি সদস্য তোজাম্মিল হক, শাহ জাহান, আলী নেওয়াজ, ফয়সল আহমদের ভাই কয়েস আহমদ ও সোহান আহমদ, এমদাদ হুদা প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, তাহিরপুরে সুদখোরদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বাড়ছে। শফিক ও রফিকের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে বিপর্যন্ত হয়ে ফয়সল আত্মহত্যা করেছেন। সুদের টাকার জন্য তাঁদের হুমকিতে ফয়সল দিশাহারা হয়ে পড়েছিলেন। এই সুদখোরদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
মামলা ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ফয়সল আহমদ বালু ও পাথরের ব্যবসা করতেন। বছর তিনেক আগে শফিক মিয়ার কাছ থেকে এক লাখ টাকা সুদে এনেছিলেন। এ পর্যন্ত তিনি তিন লাখ টাকা দিয়েছেন। শফিকের দাবি, তাঁকে আরও সাড়ে তিন লাখ টাকা দিকে হবে। এ জন্য ফয়সলকে চাপ দেওয়া হচ্ছিল। শফিকের সঙ্গে আরও কয়েকজন আছেন, যাঁরা ফয়সলকে টাকার জন্য চাপ দিতেন, এর মধ্যে রফিক মিয়াও আছেন। ঘটনার দিন শফিক ও রফিক টাকার জন্য ফয়সলকে চাপ দেন। শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। এরপর সন্ধ্যায় ফয়সলের ফেসবুক পোস্ট দেখে সবাই তাঁকে খুঁজতে শুরু করেন। পরে রাত সাড়ে আটটার দিকে গ্রামের পশ্চিম পাশের একটি বটগাছে ঝুলন্ত অবস্থায় ফয়সলের লাশ পাওয়া যায়।
জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তাহিরপুর থানার উপপরিদর্শক নাজমুল হাসান বলেন, ঘটনার পর থেকেই আসামিরা পলাতক। তাঁদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।