‘অল্প সবজি’ হাটে নিয়ে ‘গাদা গাদা টাকা’ পাচ্ছেন যশোরের চাষিরা

যশোরে উৎপাদিত ফুলকপি ঢাকাসহ সারা দেশে পাঠানোর কাজে ব্যস্ত ব্যাপারী ও শ্রমিকেরা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোরের বারীনগর মোকামেছবি: প্রথম আলো

যশোর সদর উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের সবজিচাষি মনিরুল ইসলাম। সদরের বারীনগর সবজির হাটে গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি ৬০ কেজি টমেটো ও ১৬০ কেজি বেগুন নিয়ে এসেছিলেন। মুহূর্তের মধ্যে টমেটো ৩০ টাকা ও বেগুন (ভালো-মন্দ গড়ে) ৩৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়ে যায়। তিনি এ বছর ৪৫ শতক জমিতে বেগুন, টমেটো ও মটরশুঁটির আবাদ করেছেন।

বেচাকেনার পর হাটে বসেই মনিরুলের সঙ্গে কথা হয়। সবজির দাম কেমন পেলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বছর সবজিচাষিদের লটারি টিকিট বেঁধে গেছে। অল্প মাল হাটে নিয়ে গাদা গাদা টাকা পাচ্ছি। যাঁদের মাঠে সবজি রয়েছে, তাঁদের এবার বাম্পার।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, শীতের আগমুহূর্তের বৃষ্টিতে নিচু জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাঁর জমি একটু উঁচুতে থাকায় ফসলের তেমন ক্ষতি হয়নি। যে কারণে এবার গত বছরের তুলনায় টমেটো ও বেগুনের তিন গুণ বেশি দাম পাচ্ছেন।

গতকাল বারীনগর সবজি মোকামে ছিল হাটের দিন। দুপুরে হাটে গিয়ে দেখা যায়, ছয় থেকে সাতটি ট্রাকে সবজি ওঠানোর কাজে ব্যস্ত ব্যাপারী ও শ্রমিকেরা। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, অন্য বছরের এই সময় হাটের দিনে ৩০ থেকে ৩৫টি ট্রাকে সবজি ওঠানো হতো। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলা শহরে এই সবজি পাঠানো হতো। এ বছর সেখানে সবজির সরবরাহ কমে গেছে।

যশোরে উৎপাদিত ফুলকপি ঢাকাসহ সারা দেশে পাঠানোর কাজে ব্যস্ত ব্যাপারী ও শ্রমিকেরা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোরের বারীনগর মোকামে
ছবি: প্রথম আলো

হাটে ব্যাপারীদের কাছ থেকে খাজনার টাকা আদায়ের কাজ করেন বাবুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আজ (বৃহস্পতিবার) মাত্র ছয় হাজার টাকা খাজনা উঠেছে। অথচ গত বছর এই সময়ে হাটের দিনে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা খাজনা আদায় হতো।’

ব্যবসায়ীরা জানান, গতকাল বারীনগর বাজারে ফুলকপি ২৮-৩০ টাকা, শিম (সবুজ) ৩০, শিম (লাল) ২২, বেগুন (বাছাইকৃত) ৪৫–৫০, পেঁয়াজ ৬০–৬২ টাকা কেজিতে এবং বাঁধাকপি ১০–১৪ ও লাউ ৪৫–৫০ টাকায় প্রতিটি পাইকারি বেচাকেনা হয়েছে।

বারীনগর বাজারে ১২ মণ ফুলকপি নিয়ে এসেছিলেন কৃষক সোলাইমান মুন্সী। মাদারীপুর থেকে আসা ব্যাপারী কুব্বাস আলী এই ফুলকপি ৩০ টাকা কেজিতে কিনে নেন। গত বছর এই ফুলকপি প্রতি কেজি পাঁচ থেকে ছয় টাকায় পাইকারি কিনেছিলেন বলে জানান কুব্বাস। এবার এত দামের কারণ জানতে চাইলে কুব্বাস আলী বলেন, হাটে সবজির সরবরাহ কম। এ জন্য কৃষকদের কাছে আগাম ফোন করে সবজি কিনতে হচ্ছে। পাইকারি ৩০ টাকায় ফুলকপি কিনতে হলো। ট্রাকে এই সবজি মাদারীপুর কাঁচাবাজারে নিয়ে আড়তের মাধ্যমে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হবে। সেখান থেকে ভোক্তার হাতে পৌঁছাবে। মাঝে কতগুলো হাতবদল হবে। ফলে ধাপে ধাপে দাম বেড়ে যায়।

এত দামে সবজি বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষক সোলাইমান মুন্সী বলেন, প্রতি বিঘা ফুলকপি চাষে অন্তত ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ খরচ বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর সার, কীটনাশক, সেচ ও শ্রমিকের খরচ বেড়েছে। তা ছাড়া এবার আবহাওয়ার কারণে ফসলের উৎপাদন কম হয়েছে। ফলে বাজারে যতটুকু সবজি উঠছে, তার দাম চড়া হয়ে যাচ্ছে।

সার ও কীটনাশকের দামের বিষয়ে খোঁজ নিতে বারীনগর বাজারে সার-কীটনাশকের দোকান শরিফুল এন্টারপ্রাইজে গিয়ে জানা গেল, সবজি চাষে ব্যবহৃত সারের মধ্যে ইউরিয়া ২২ টাকা, ডিএপি ১৮, এমওপি ১৭ ও টিএসপি সার ২৪ টাকা কেজিতে বর্তমানে খুচরা বিক্রি হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী শরিফুল ইসলাম বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর সব ধরনের সারের ক্ষেত্রে কেজিতে দুই থেকে ছয় টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এ ছাড়া কীটনাশক বা বালাইনাশকের ক্ষেত্রে অন্তত ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ দাম বেড়েছে।

বাজারে সবজির দাম না কমার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা জ্যেষ্ঠ কৃষি বিপণন কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, শীতের আগমুহূর্তের বৃষ্টিতে সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যে কারণে মাঠে এখন শীতকালীন সবজির আবাদ কম। তারপরও দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে।