কুষ্টিয়া বিএনপির কমিটি বাতিলের দাবিতে অনশনসহ ৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা পদবঞ্চিতদের

(কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের। সোমবার দুপুরে কুষ্টিয়া শহরের একটি রেস্তোরাঁয়ছবি: প্রথম আলো)

কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে আবার তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছেন পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। আগামী বুধবার থেকে ঢাকা ও কুষ্টিয়ায় তাঁরা এ কর্মসূচি পালন করবেন। আজ সোমবার বেলা একটায় শহরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

তিন দিনের কর্মসূচির মধ্যে আছে ৮ জানুয়ারি কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ; ১২ জানুয়ারি ঢাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও অনশন এবং ১৬ জানুয়ারি কুষ্টিয়ায় অনশন ও বিক্ষোভ সমাবেশ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও পদবঞ্চিত নেতা আইনজীবী শামিমুল হাসান। তিনি বলেন, গত বছরের ৪ নভেম্বর জেলা বিএনপির দুই সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদিত হয়। সবার প্রত্যাশা ছিল, অনুমোদিত কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব ত্যাগী, পরীক্ষিত ও বিগত ১৬ বছরে কারা নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের দিয়ে পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি করবেন। কিন্তু ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটিতে ত্যাগীদের বাদ দেওয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্যপদে যাঁরা স্থান পেয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশই আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের একান্ত আস্থাভাজন ও অনুগত। যাঁদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগ আছে। অবিলম্বে ওই কমিটি বাতিল করে আবার আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হোক। এ কমিটি বাতিলের দাবিতে তিন দিনের বিক্ষোভ সমাবেশ ও অনশন কর্মসূচি পালন করা হবে।

শামিমুল হাসান আরও বলেন, বিগত কয়েক দিনে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি করেছেন তাঁরা। এসব কমিটিতেও বিতর্কিত ও আওয়ামী লীগের আমলে গায়ে হাওয়া দিয়ে বেড়ানো নেতা-কর্মীদের জায়গা দেওয়া হয়েছে। এভাবে চললে আগামী দিনে জেলায় বিএনপির রাজনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা কৃষক দলের সাবেক সভাপতি গোলাম কবির বলেন, ‘জেলা কমিটির ৩১ জনের মধ্যে অন্তত ১২ জন আছেন, যাঁরা বিতর্কিত। যাঁদের বিগত দিনে কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে দেখা যায়নি। এই কমিটি মামা-ভাগনে কমিটি। সম্প্রতি দেখা গেছে, কমিটির লোকজন হাটঘাট দখলে যুক্ত হয়েছেন, যা বিএনপিকে ক্ষতি করছে।’

জেলা বিএনপির সাবেক ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক মেজবাউর রহমান বলেন, ‘ত্যাগীদের কেন বাদ দেওয়া হলো, সেই জায়গায় আমাদের প্রতিবাদ। কুতুব-জাকিরের পকেট কমিটি মানি না।’ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক কাজল মাজমাদার বলেন, ‘বিগত ১৫টা বছর আমাকে বাড়িছাড়া করা হয়েছিল। আমার পরিবারের পাঁচজন সদস্য মারা গেছে, তাদের দাফনে আসতে পারিনি। অন্যায় ছিল আমি বিএনপি করি। আমার চেয়ে বড় ত্যাগী নেতা এই কুষ্টিয়া শহরে নেই। যারা এখন নেতা সাজছে, তারা সবাই সুযোগে হাওয়া লাগাচ্ছে।’

সংবাদ সম্মেলনে তিন দিনের কর্মসূচি যথাযথভাবে পালনের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়। কমিটি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত পরবর্তী সময়ে আরও বড় কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। সেখানে জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম, আবদুর রাজ্জাকসহ দলের আরও অন্তত ১০ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত ১৭ নভেম্বর কমিটি বাতিলের দাবিতে শহরের এনএস রোডে প্রায় আধা কিলোমিটারজুড়ে নেতা-কর্মীরা মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। একই দাবিতে ৬ নভেম্বর বিক্ষোভ সমাবেশ করে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিলেন নেতা-কর্মীরা।

পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের অভিযোগের বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জাকির হোসেন সরকার বলেন, ‘তারা যা করছে, তা ঠিক করছে না। সম্পূর্ণ প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে ওয়ার্ড থেকে জেলা পর্যন্ত কমিটি গঠন করা হবে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই যারা ত্যাগী বা দলের জন্য নিবেদিত, তারা বের হয়ে আসবে। তাদের উচিত দলের গঠনতন্ত্র মেনে দল করা। দলকে সহযোগিতা করা।’

গত ২৫ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি কুতুব উদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সরকারকে সদস্যসচিব করে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আংশিক আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। এরপর ৪ নভেম্বর ৩১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, কমিটিতে যাঁদের রাখা হয়েছে, তাঁদের অনেকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতন ও অত্যাচারের সময় মাঠে ছিলেন না।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ১২ সেপ্টেম্বর এক বিজ্ঞপ্তিতে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির নির্বাহী কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় বাতিল করা হয়। ২০১৯ সালের ৮ মে সৈয়দ মেহেদী আহমেদকে সভাপতি ও সোহরাব উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল রেখে জেলা বিএনপির ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। এর আগে ২০১২ সালে গঠিত কমিটিতে এই দুজন একই পদে ছিলেন।