পটুয়াখালীতে হনুমান পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা

পটুয়াখালী জেলার মানচিত্র

পটুয়াখালীতে দলছুট একটি মুখপোড়া হনুমানকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। বন বিভাগ পটুয়াখালীর সদরের রেঞ্জ কর্মকর্তা নয়ন মিস্ত্রি বাদী হয়ে গতকাল মঙ্গলবার একজনকে আসামি করে মামলাটি করেছেন।

ওই মামলার আসামির নাম মো. ছিদ্দিক খান। তিনি গলাচিপা উপজেলার আমখোলা ইউনিয়ন উত্তর আমখোলা গ্রামের বাসিন্দা। মামলাটি বন বিভাগের পটুয়াখালী সদর কার্যালয়ে করা হলেও পরে এর অনুলিপি আদালতে পাঠানো হবে।

মুখপোড়া দলছুট হনুমানটিকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রাণিপ্রেমী সংগঠন অ্যানিমেল লাভার অব পটুয়াখালী এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রায় এক মাস ধরে হনুমানটি পটুয়াখালীর সদর উপজেলার আউলিয়াপুর এলাকায় বিচরণ করছিল। বন বিভাগ থেকে হনুমানটিকে যাতে বিরক্ত করা না হয়, এ জন্য এলাকার লোকজনকে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। ২৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে হনুমানটিকে জেলার গলাচিপা উপজেলার আমখোলা ইউনিয়ন উত্তর আমখোলা গ্রামে দেখা গেছে। খাবারের সন্ধানে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে এটি গাছ থেকে নিচে নেমে আসে। এরপর ছিদ্দিক খান লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে হনুমানটিকে হত্যা করেন। পরে গ্রামেই মৃত হনুমানটিকে মাটিচাপা দেওয়া হয়।

খবর পেয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতেই বন বিভাগের লোকজন হনুমানটির মরদেহ মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করে পটুয়াখালী নিয়ে আসেন। পরদিন সকালে জেলা ভেটেরিনারি হাসপাতালের চিকিৎসক ময়নাতদন্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করেন এবং পরে পটুয়াখালী বন বিভাগ মৃত হনুমানটিকে মাটিচাপা দেন।  

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. জামাল উদ্দিন স্বাক্ষরিত ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, মুখপোড়া হনুমানটির বয়স প্রায় ১৫ বছর। এর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। আঘাতের কারণে মাথা ফেটে গিয়েছিল। এর নাক-মুখ দিয়েও রক্ত বের হয়েছে। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে হনুমানটির মৃত্যু হয়েছে।
এ বিষয়ে বন বিভাগের পটুয়াখালীর সদরের রেঞ্জ কর্মকর্তা নয়ন মিস্ত্রি বলেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পরই তিনি বাদী হয়ে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ নিরাপত্তা আইন-২০১২-এর ৬ ও ৩৯ ধারায় মো. ছিদ্দিক খানকে আসামি করে মামলাটি করেছেন।

হনুমানটিকে পিটিয়ে হত্যা করার খবরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে প্রাণিপ্রেমী সংগঠন অ্যানিমেল লাভার অব পটুয়াখালী। সংগঠনের সদস্য আহসানউল্লাহ হাসান বলেন, ‘প্রায় এক মাস ধরে হনুমানটি এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। সম্ভবত খাবারের সংকটে হনুমানটি লোকালয়ে চলে এসেছে। মানুষের কোনো ক্ষতি করেনি, খুবই শান্ত ছিল। তাকে বিরক্ত না করার জন্য এলাকার স্থানীয় ব্যক্তিদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু এরপরও হনুমানটিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, যা সত্যিই অমানবিক। আমরা এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানাচ্ছি।’