ডিজিটাল ডেটাবেজ তৈরিতে ধীরগতি

সেপ্টেম্বরে উপকারভোগীদের ১৫ টাকা কেজি দরে চাল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

চুয়াডাঙ্গায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকাভুক্ত উপকারভোগী ব্যক্তিদের ডিজিটাল ডেটাবেজ তৈরির কাজে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। এতে সেপ্টেম্বরে শুরু হতে যাওয়া সরকারের বিশেষ উদ্যোগ থেকে উপকারভোগী ব্যক্তিদের সরাসরি বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এ বিষয়ে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা নির্বাচন কমিশনের সার্ভারের ত্রুটির পাশাপাশি ইউপি চেয়ারম্যানদের অসহযোগিতা ও হস্তক্ষেপকে দায়ী করছেন। তবে ইউপি চেয়ারম্যানদের দাবি, খাদ্য বিভাগের কাছে থাকা বর্তমান তালিকায় অনেক অসংগতি আছে। বিশেষ করে এলাকার স্বচ্ছল ব্যক্তি, মৃত ব্যক্তি ও এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়া অনেকের নাম আছে।

দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বল্প মূল্যে খাদ্যসহায়তা দিতে ২০১৬ সালে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১০টা কেজি দরে চাল বিতরণ (বিক্রি) কর্মসূচি শুরু হয়। প্রতিবছরের মার্চ, এপ্রিল, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মোট পাঁচ মাস খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চলে। চুয়াডাঙ্গায় উপকারভোগী রয়েছেন ৩১ হাজার ৯৩৪ জন এবং ডিলার ৭২ জন। ১০ টাকা দরে ৩০ কেজি করে চাল বিক্রি করা হতো। চলতি অর্থবছরে প্রতি কেজি চালের দাম ১৫ টাকা।

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির অনিয়ম দূরীকরণ, তালিকা সঠিকভাবে তৈরি ও ডুপ্লিকেশন রোধ করতে ডিজিটাল ডেটাবেজের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ৩১ আগস্টের মধ্যে ৩১ হাজার ৯৩৪ জন উপকারভোগীর তথ্য ডিজিটাল ডেটাবেজ তৈরির জন্য যাচাই শেষ করার কথা। তবে ২২ আগস্ট পর্যন্ত ৯ হাজার ৭৬৬ জনের তালিকা যাচাই শেষে ডিজিটাল ডেটাবেজে সংযুক্ত হয়েছে।

খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নির্ধারিত সময়ে যাঁদের তথ্য ডেটাবেজের আওতায় আসবে না, তাঁরা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সুবিধা পাবেন না। সে হিসেবে সেপ্টেম্বর মাসে জেলার দুই-তৃতীয়াংশ উপকারভোগী বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ উপকারভোগী ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করে উপজেলা কমিটিতে পাঠায় এবং উপজেলা কমিটি তা অনুমোদন করে। উপজেলা কমিটি অন্য খাদ্যনিরাপত্তা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত নন, এমন হতদরিদ্র প্রতি পরিবারের একজনের নামে ছবিসহ কার্ড ইস্যু করে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটির সভাপতি ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সদস্যসচিব।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এ কে এম শহীদুল হক বলেন, সরকারের এই উদ্যোগ সফল করতে ইউপি চেয়ারম্যানদের আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। কিন্তু বেশির ভাগ ইউপি চেয়ারম্যান সেভাবে সহযোগিতা করছেন না। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে ত্রুটির কারণে অনেকের তথ্য হালনাগাদ করা যাচ্ছে না।

উপকারভোগী ব্যক্তিদের তথ্য যাচাইয়ের জন্য লিখিতভাবে ইউপি চেয়ারম্যানদের অনুরোধ করলেও সাড়া মেলেনি বলে জানিয়েছেন আলমডাঙ্গা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুল হামিদ।

জেলার ৩৮টি ইউপির মধ্যে ২১টিতেই নতুন চেয়ারম্যান। সুবিধাভোগীদের তালিকা নিয়ে পুরোনো চেয়ারম্যানদের তেমন অভিযোগ নেই। তবে নতুন চেয়ারম্যানরা অভিযোগ করেছেন, বিগত সময়ে তালিকা তৈরিতে প্রকৃত দরিদ্রদের পাশ কাটিয়ে তৎকালীন চেয়ারম্যান ও তাঁদের অনুসারীরা সচ্ছল ব্যক্তি, একই পরিবারের একাধিক সদস্য, ডিলারের আত্মীয়কে তালিকাভুক্ত করেছেন।

এ বিষয়ে বেলগাছি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক দাবি করেন, আগের পরিষদ খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকা তৈরিতে অনিয়ম করেছে। অনেক ধনী-সচ্ছল ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে। শিগগিরই তালিকার অসংগতি জনসম্মুখে তুলে ধরবেন।

সদর উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটির সভাপতি ইউএনও শামীম ভূঁইয়া বলেন, বেশ কটি ইউনিয়নে উপকারভোগী ব্যক্তিদের তালিকা নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। সমস্যা সমাধানে করণীয় বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে। তবে কারও ইচ্ছেমতো তালিকা থেকে বাদ বা সংযোজনের সুযোগ নেই।