বগুড়ায় মেলায় যাত্রা-সার্কাসের আয়োজন নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ

পৌষ মেলা উপলক্ষে বসানো হয়েছে দ্য কিং স্টার সার্কাস। শনিবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের মাঠেছবি: সংগৃহীত

বগুড়ার ধুনট উপজেলায় পৌষ মেলায় যাত্রা ও সার্কাসের আসর বসানো নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের মাঠে এ ঘটনা ঘটে।

সংঘর্ষে এক পক্ষের দুজন আহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন ধুনটের পুকুরিয়া গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে রবিন মিয়া (২০) ও ভুতবাড়ি গ্রামের কামাল মন্ডলের ছেলে তাওহীদ হোসেন (২১)। তাঁদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ধুনট উপজেলা বিএনপির দুটি পক্ষ বিদ্যমান। এক পক্ষে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি তৌহিদুল আলম, অন্য পক্ষে বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী গোলাম মো. সিরাজ। গত ৫ আগস্টের পর থেকে দুই পক্ষ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে আছে। ধুনটের ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের মাঠে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে পৌষ মেলা আয়োজনের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে অনুমতি নিয়েছেন গোলাম মো. সিরাজের অনুসারী স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য বেলাল হোসেন। ইতিমধ্যে মেলার আয়োজন শেষ। আগামীকাল রোববার উদ্বোধনের কথা আছে। মেলায় যাত্রা ও সার্কাস বসানোর অনুমতি দিয়েছে প্রশাসন। সেই অনুযায়ী আয়োজকেরা ‘দ্য কিং স্টার সার্কাস’ ছাড়াও যাত্রাপালার আয়োজন করেছে।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বেলা ১১টার দিকে উপজেলা বিএনপির সভাপতি তৌহিদুল আলমের সমর্থক হিসেবে পরিচিত ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে বিএনপি ও জামায়াতের কিছু লোক মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে যাত্রা-সার্কাসের আসর বসানোর বিরোধিতা করেন। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডার এক পর্যায়ে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে আসা লোকজন মেলায় হামলা করেন। বাধা দিতে গেলে আয়োজকদের সঙ্গে জাহাঙ্গীরের সমর্থকদের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থক রবিন ও তাওহীদ আহত হন।

মেলার আয়োজক ও ইউপি চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে মাসব্যাপী পৌষ মেলার অনুমতি নেওয়া হয়েছে। মেলায় যাত্রা ও সার্কাসের অনুমতি দিয়েছে প্রশাসন। আগামীকাল মেলার উদ্বোধন হবে। অথচ জামায়াতের ইন্ধনে বিএনপির নেতা জাহাঙ্গীর আলম সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে মেলার যাত্রার প্যান্ডেলে হামলা চালিয়েছেন। তাঁদের ওপর কেউ হামলা করেননি। নিজেরাও হাঙ্গামা করতে গিয়ে আহত হতে পারেন। তাঁরা প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা গ্রামীণ বিনোদনের জন্য মেলার আয়োজন করেছি। মৌলবাদী একটি গোষ্ঠী মেলার বিরোধিতা করছে। জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির আদর্শগত বিরোধ থাকলেও জাহাঙ্গীর জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত করে মেলা বন্ধে উঠেপড়ে লেগেছেন।’

জানতে চাইলে বিএনপির নেতা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রামকৃষ্ণপুর মাঠের ফসলি জমিতে মেলা আয়োজন নিয়ে জামায়াত-বিএনপি থেকে শুরু করে সর্বস্তরের এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ। এলাকাবাসীর অনুরোধে কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে যাত্রা-সার্কাস আয়োজনের আপত্তির কথা জানাতে গেলে মেলার লোকজন তাঁদের ডেকে নেন। এরপর পরিকল্পিতভাবে তাঁরা তাঁর লোকজনের ওপর অতর্কিত হামলা করেন। এতে দুজন আহত হয়েছেন। পরে থানা থেকে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। মেলার নামে অশ্লীল যাত্রা ও সার্কাসের আয়োজন বন্ধ করতে তাঁরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন।

ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইদুল আলম বলেন, ৩১ জানুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি মেলা আয়োজনের জন্য জেলা প্রশাসন অনুমতি দিয়েছে। সেখানে যাত্রা-সার্কাসের আয়োজনের কথাও উল্লেখ আছে। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সামান্য ঝামেলা হয়েছিল। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। এ বিষয়ে এখনো কেউ থানায় অভিযোগ করেননি।