নদে ভেসে উঠছে মাছ, ধরতে শত শত মানুষের ভিড়
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ফুলজোড় নদের বিভিন্ন অংশে নানা প্রজাতির মরা মাছ ভেসে উঠছে। মরা ও প্রায় মরা এসব মাছ ধরতে নদের দুই পাড়ে ভিড় জমিয়েছেন শত শত নারী-পুরুষ ও শিশু।
স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেন, নদের উজানে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার দুটি শিল্পকারখানার বর্জ্য নদে ফেলায় পানি দূষিত হয়ে গেছে। এ কারণে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, সাপ, ব্যাঙ, কুঁচে, কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ জলজ প্রাণী মরে যাচ্ছে। দুই দিন ধরে এ অবস্থা চলছে।
আজ শনিবার সকালে উপজেলার রায়গঞ্জ পৌরসভার ধানগড়া, রণতিথা, মহেশপুর ও চান্দাইকোনা ইউনিয়নের বেড়াবাজুয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদের পানির রং বদলে গেছে। অজস্র মাছ মরে ভেসে উঠছে। এলাকার ছেলেমেয়েসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ সেই মাছ ধরছেন।
মাছ ধরতে আসা ব্রহ্মগাছা ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের কৃষিশ্রমিক মো. হাসান বলেন, ‘সকালে বাজারে এসেছিলাম ধান কাটতে যাব বলে। এসে দেখি অনেকেই নদে ভেসে ওঠা মাছ ধরছে। তাই নেমে পড়লাম।’ চান্দাইকোনা ইউনিয়নের সরাই হাজীপুর গ্রামের সালমান বলেন, ‘কাজ বাদ দিয়ে নদে ভেসে ওঠা মাছ ধরছি। ছোট-বড় নানা ধরনের মাছ ধরতে ভালোই লাগছে। তবে এভাবে কেন মাছ মরে ভেসে উঠছে, তা চিন্তার বিষয়।’
স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. রাকিবুল হাসান বলেন, ‘এ নদে নিয়মিত গোসল করি। কিন্তু দুই দিন ধরে দেখছি পানির রং এমনভাবে বদলে গেছে যে এ পানিতে গোসল করতে ভয় লাগে। আজ দেখছি সব ধরনের মাছ মরে ভেসে উঠছে। এভাবে একটি নদের মাছসহ জলজ প্রাণী ধ্বংস করার নজির আর কোথাও আছে বলে মনে হয় না।’ দুজন গৃহবধূ বলেন, দুই দিন ধরে নদের পানি এমনভাবে দূষিত হয়েছে যে ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
কয়েক বছর ধরেই দুটি শিল্পকারখানার বর্জ্যে এই নদের পানি দূষিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতি সংরক্ষণের বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বাধীন জীবনের নির্বাহী পরিচালক মো. আবদুর রাজ্জাক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এর প্রতিবাদে শেরপুর ও রায়গঞ্জ উপজেলার সচেতন মানুষ প্রতিবাদ, আন্দোলন করলেও নদীদূষণ বন্ধ হয়নি। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে স্থায়ী প্রতিকারের অনুরোধ জানিয়ে নদীদূষণ, জলজ জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।
রায়গঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. আবদুল্লাহ আল পাঠান বলেন, কয়েক বছর ধরে ফুলজোড় নদের পানি দূষণের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বলার পরও কোনো বিহিত হচ্ছে না। প্রতিবছরই এমন সময় উজানের দুটি শিল্পকারখানার বর্জ্যে নদের মাছসহ জলজ প্রাণী মরে যায়।
জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।