ধর্ষণ মামলায় জবানবন্দি দিয়েছেন ভুক্তভোগী, সাক্ষ্য দিতে এসে আসামিদের চিনছেন না

চট্টগ্রাম আদালত ভবনফাইল ছবি

সাড়ে চার বছর আগে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে বাসায় আটকে রেখে ধর্ষণ ও যৌনকর্মে বাধ্য করার বর্ণনা দেন এক নারী। তদন্ত শেষে পুলিশ অভিযোগপত্রও দেয় আসামিদের বিরুদ্ধে। তবে সাক্ষ্য দিতে এসে ভুক্তভোগী নারী বললেন, চার আসামির কাউকে তিনি চেনেন না। রাষ্ট্রপক্ষ ওই নারীকে বৈরী ঘোষণা করেন। পরে আদালত তাঁকে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার অভিযোগে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। আজ বুধবার দুপুরে মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল চট্টগ্রামের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত এই নির্দেশ দেন।

আদালত সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন এলাকায় চাকরি দেওয়ার কথা বলে তিন নারীকে বাসায় আটকে রেখে ধর্ষণ করেন চার ব্যক্তি। পরে তাঁদের টাকার বিনিময়ে যৌনকর্মেও বাধ্য করেন। কৌশলে সেখান থেকে বের হয়ে তিন নারীর পক্ষে একজন বাদী হয়ে মামলা করেন। ভুক্তভোগী তিন নারীর একজন ওই বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর অতিরিক্ত চিফ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জবানবন্দিও দেন। সেখানে বলেন, চাকরি দেওয়ার কথা বলে তাঁদের বাসায় আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয়। পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয়।

তদন্ত শেষে পুলিশ নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে ধর্ষণের অভিযোগে একটি এবং যৌনকর্মে বাধ্য করার অভিযোগে পৃথক আরেকটি অভিযোগপত্র দেয়। দুটিতে ঘটনার ভুক্তভোগী নারীদের সাক্ষী রাখা হয়। নারী ও শিশু আইনে দেওয়া অভিযোগপত্রটি বিচারের জন্য নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালে যায়। যৌনকর্মে বাধ্য করার অভিযোগপত্রটি মানব পাচার ট্রাইব্যুনালে আসে।

ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আজ মানব পাচার ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে আসেন সাক্ষী ভুক্তভোগী এক নারী। সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, মামলার আসামিদের তিনি চেনেন না। ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তখন রাষ্ট্রপক্ষ ওই সাক্ষীকে বৈরী ঘোষণা করেন।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী আরও বলেন, আদালতে সাক্ষী কিছুই জানেন না দাবি করলে ঘটনা সম্পর্ক দেওয়া তাঁর জবানবন্দি, শারীরিক পরীক্ষার কাগজপত্রে সই থাকার কথা বলা হয়। তবে এরপরও ওই নারী তাঁর বক্তব্যে অনড় থাকেন। তখন ট্রাইব্যুনাল আইনি প্রক্রিয়ার অপব্যবহার করতে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করায় মানব পাচার আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে আমলে নেন। মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ায় সাক্ষীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

জানতে চাইলে মামলার বাদী ঘটনার ভুক্তভোগী আরেক নারী আজ বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মতো ওই নারী ধর্ষণের শিকার ও যৌনকর্মে বাধ্য হন। তাই মামলায় তাঁর কথাও বলেছি। তিনি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছিলেন।’